মিরপুর রোডে ভবনে বিস্ফোরণ, নিহত ৩

কাঁপল আশপাশের ভবন, ভূমিকম্প ভেবে দৌড়

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৬ মার্চ, ২০২৩ at ৭:২২ পূর্বাহ্ণ

ঢাকার মিরপুর রোডে সুকন্যা টাওয়ারের কাছে বিকট বিস্ফোরণে তিনতলা একটি ভবনের আংশিক ধসে পড়েছে। এ ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিনজনের; আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। গতকাল সকাল ১০টা ৫২ মিনিটের দিকে ভবনটির তৃতীয় তলায় বিস্ফোরণ ঘটে বলে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা

 

জীবন মিয়া জানান। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পলাশী, ধানমণ্ডি টহল এবং সিদ্দিকবাজার স্টেশনের চার ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা শাহজাহান মোল্লা জানান, ভবনটির নাম শিরিন ভবন। পাশেই সুকন্যা টাওয়ার এবং ভবন মালিক সমিতির ফটক। বিস্ফোরণে তিনতলা ওই ভবনের একপাশের দেয়াল ধসে পড়ে। আহত ৩০ থেকে ৪০ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া হয় কাছের পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে জানান হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক মোসাদ্দেক হোসেন। খবর বিডিনিউজের।

নিহতরা হলেন ওই ভবনের তৃতীয় তলায় লায়রা প্রোডাক্টসে কাজ করা শরীয়তপুরের শফিকুজ্জামান (৪৫), ঢাকার লালবাগের আব্দুল মান্নান (৬৫) ও নরসিংদীর তুষার (৩৫)।ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের নিচতলায় কাপড়ের দোকানপাট, দ্বিতীয় তলায় সেলুন ও লন্ড্রির দোকান এবং তৃতীয় তলায় ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের অফিস। বিস্ফোরণের পর তৃতীয় তলার ওই অফিসের চেয়ার, দরজার শাটার ও আসবাবপত্রের কিছু সড়কে ছিটকে পড়ে।

ঘটনাস্থলে থাকা শামসুল আলম খোকন নামে এক প্রকৌশলী বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ এত বিকট ছিল যে, ঘটনাস্থল থেকে ৪০০ মিটার দূরে সায়েন্স ল্যাবে তার অফিসের দরজার গ্লাস ভেঙে গেছে। আমি মনে করেছিলাম, আমার অফিসেই কোথাও বিস্ফোরণ হয়েছে।

ঘটনাস্থলে পুলিশের নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত কমিশনার শাহেন শাহ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভবনের তৃতীয় তলায় এসিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। পুলিশের বম্ব ডিসপোজাল টিম ঘটনাস্থলে কাজ করছে।

দুর্ঘটনা মনে হচ্ছে : বিস্ফোরণের ঘটনাকে প্রাথমিকভবে দুর্ঘটনা বলে মনে করছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গতকাল দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপাতত মনে হচ্ছে এটি একটি দুর্ঘটনা। বম ডিসপোজাল টিম এখনো বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তবে অন্য কোনো কারণে হয়েছে কিনা তা খুঁজে দেখতে আরো তদন্ত প্রয়োজন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, বিস্ফোরণের পর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর পূর্ব পাশে একটি আবাসিক ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কাঁপল আশেপাশের ভবন, ভূমিকম্প ভেবে দৌড় : মিরপুর রোডের প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারে সকাল পৌনে ১১টার দিকে নিজের টেইলারিং শপে গিয়ে বসেন মাহবুব। কয়েক মিনিট না যেতেই হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা ভবন। আতঙ্কে দ্বিতীয় তলা থেকে তিনি দৌড়ে নিচে নেমে আসেন। দেখতে পান, পাশের একটি ভবন ছেয়ে গেছে কালো ধোঁয়ায়।

ভয়ে বেশ হকচকিয়ে যাওয়া মাহবুব ততক্ষণে বুঝতে পারেন, তাদের মার্কেটে নয়, পাশের সেই ভবনেই ঘটেছে ভয়ানক কিছু। তিনি বলেন, সবেমাত্র দোকানে এসে বসেছি। হঠাৎ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে পুরো ভবন। ভূমিকম্প ভেবে দৌড়ে নিচে নেমে দেখতে পাই পাশের ভবনেই বিস্ফোরণ।

দুর্ঘটনার পরপর গিয়ে দেখা যায়, শিরিন ভবন নামের তিনতলা ওই ভবনের পশ্চিম ও উত্তর পাশে নিচের সড়কে দেয়ালের অংশ, টেবিল, স্টিলের আলমারি ও দোকানের শাটারের অংশ বিশেষসহ বিভিন্ন জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। ততক্ষণে সেখানে ফুটপাতের দোকান না বসায় বড় ধরনের প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে বলে মনে করেন সানা উল্লাহ ভূঁইয়া নামে প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের আরেক দোকানদার।

পড়ে আছে পেঁপে, নেই দোকানদার : শিরিন ভবনের পশ্চিমউত্তর কোণে নিচে একটি টুকরিতে পেঁপে নিয়ে বসেছিলেন এক ব্যক্তি। বিস্ফোরণের পর অনেক সময় গড়ালেও তার খোঁজ মেলেনি, স্যান্ডেল আর পেঁপেসহ টুকড়ি পড়েছিল সড়কেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু করতে চেম্বার সভাপতির আহ্বান
পরবর্তী নিবন্ধভূমি খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে : ভূমিমন্ত্রী