যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে
মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে আতঙ্কের ব্যাপারে চীনকে জানানোর কথা বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সচিবালয়ে গতকাল রোববার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির সংঘাতে আমাদের কিছু কিছু ক্ষতি তো হচ্ছে। আকাশসীমা লঙ্ঘন হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের চমৎকার সম্পর্ক। এক্ষেত্রে তারা কিছু করতে পারে কিনা বলেছি। খবর বিডিনিউজের।
দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে পড়ছে এপারে। ফলে বাংলাদেশিরা রয়েছেন আতঙ্কে।
সকালে এ সমস্যার ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন কাদের। তার আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। সীমান্তের সমস্যা নিয়ে সড়কমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ অচলাবস্থা, আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাত, যার রেশ আমাদের সীমান্তে এসে গেছে। গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়, জনমনে আতঙ্ক তো ছড়ায়। যুদ্ধটা তাদের অভ্যন্তরীণ। কিন্তু সীমান্তে গোলাগুলির আওয়াজ আমাদের এখানে যখন চলে আসে, স্বাভাবিক কারণে ভয়ভীতিও আসতে পারে। এজন্য চীনের হস্তক্ষেপ চেয়েছি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান কাদের। চীনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস এসেছে বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ১১/১২ লাখের মতো রোহিঙ্গা আছে। এটা বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত বোঝা। এমনিতেই বিশ্ব সংকট চলছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আসা সাহায্যও আগের থেকে অনেক কমে গেছে। এত লোককে খাওয়ানো বাংলাদেশের পক্ষে অনেক বড় বোঝা। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করে মিয়ানমার যেন তাদের নাগরিকদের ফেরত নেয়, সে বিষয়ে চীন ভূমিকা রাখতে পারে।
চীনা দূত ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে চীনা রাষ্ট্রদূত চেষ্টা ও সহযোগিতা জোরদারের কথা বলেছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে চীনের অবস্থান প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, নির্বাচনে চীন সাপোর্ট করেছে, প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। পালাক্রমে অন্যান্য মন্ত্রীদের সঙ্গে (রাষ্ট্রদূত) দেখা করেছেন।
ভারত ও চীনকে জড়িয়ে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ভূ–রাজনৈতিক কৌশলের কারণে এখানে ভারত ও চীনের একটা শক্তি বলয় আছে। ভারত ও চীনের ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ আছে। এটা তাদের বিষয়। আমরা আমাদের স্বার্থ নিয়ে আছি, আমরা যেন তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত না হই।
আওয়ামী লীগ সরকার গায়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করবে না জানিয়ে কাদের বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলেনি যুক্তরাষ্ট্র। তারা বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে। দুই দেশের স্বার্থই আছে এখানে। নির্বাচনের পর ম্যাথিউ মিলার বক্তব্যে দুই ধরনের কথা বলেছেন। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এটাও বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতি অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্ক রাখা আমাদের দায়িত্ব। সেখান থেকে সম্পর্ক রাখি এবং সম্পর্ক রাখার অঙ্গীকার আছে এবং সেটা করে যাব।
তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে তারা আগেও বলেছে। তবে তারা বলেনি নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে। যে মন্তব্য করলে খারাপ কিছুর আশঙ্কা থাকে। নির্বাচনে কোনো সহিংসতা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর চেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কী হবে আমরা তা জানি না। বিএনপি নির্বাচনে আসল না, তার মানে কি নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হলো না?