মিয়ানমারে পেরে উঠছে না জান্তা বাহিনী

সমর্থন হারাচ্ছেন মিন অং হ্লাইং

| বৃহস্পতিবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

গত কিছুদিন ধরে মিয়ানমারের জাতিগত বিদ্রোহীদের আক্রমণে দিশেহারা দেশটির জান্তা সরকার। বিদ্রোহীরা বিভিন্ন এলাকা দখলে নিয়ে নিয়েছে। এমন পরিস্থিতির মুখে সমর্থন হারাচ্ছেন সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। চাপের মুখে হ্লাইংয়ের (৬৭) বদলে বিকল্প নেতৃত্বের কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন তার কট্টর সমর্থকরা। খবর বিডিনিউজের। মিয়ানমারের পার্বত্য শহর পাইন ও লুইনের মূল চত্বরে মঙ্গলবার ভিড় জমিয়েছিলেন কয়েকশ মানুষ। তারা সেখানে সন্ন্যাসী পাউক কো তাওয়ের কথা শুনছিলেন। ওই সন্ন্যাসী বলছিলেন, সামরিক শাসক হ্লাইংয়ের উচিত পদত্যাগ করে তার ডেপুটি জেনারেল সো উইনকে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া। ২০২১ সালে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করেছিলেন মিন অং হ্লাইং। এর মাধ্যমে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ উস্কে দিয়েছেন তিনি। এ কারণে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার পাশাপাশি মিয়ানমারের মানুষের ঘৃণাও কুড়িয়েছেন তিনি। এই জান্তা প্রধানকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে বৌদ্ধ ধর্মযাজকদের চরম জাতীয়তাবাদী একটি পক্ষ। আর তাদেরই সমর্থক পাইন ও লুইনের চত্বরে বক্তব্য দেওয়া সন্ন্যাসী পাউক তাও। মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ও সন্ন্যাসীদের মধ্যে সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। সন্ন্যাসীদের রাজনৈতিক এবং প্রায়শ সরকারবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় দেখা যায়। আবার কেউ কেউ সামরিক জেনারেলদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। এসব সন্ন্যাসীরা মনে করেন, বৌদ্ধধর্ম ও বার্মিজ সংস্কৃতি উভয়কেই বাইরের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হবে। ২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যে স্থানীয় বৌদ্ধ ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে সহিংস সংঘাতের পর চরমপন্থী সন্ন্যাসী উইরাথু ‘মা বা থা’ নামে একটি আন্দোলন বা জাতি ও ধর্ম রক্ষার সংগঠন গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম মালিকানাধীন ব্যবসা বয়কট করা। তাদের দাবি ছিল, মুসলমানদের হাতে বার্মিজ বৌদ্ধধর্ম নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঝুঁকিতে। যদিও মিয়ানমারের মুসলিমরা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্রা ৮ শতাংশ।

পিছু হটছে সেনাবাহিনী : মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের পর থেকে জান্তা সরকার এখন সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। জান্তাবিরোধী বিভিন্ন বিদ্রোহী ও সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠী মিয়ানমারের উত্তর, উত্তরপূর্বাঞ্চল, উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের শত শত জান্তা ঘাঁটিতে অহরহ হামলা চালাচ্ছে।

সামরিক জান্তা বিরোধী একটি বিদ্রোহী জোট উত্তরাঞ্চলের বেশি কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে। এর মধ্যে আছে চীন সীমান্ত সংলগ্ন কিছু এলাকাও। তিন গোষ্ঠীর বিদ্রোহী জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সমন্বিত হামলায় বহু এলাকা খুইয়ে মিয়ানমার জান্তা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ।

বিদ্রোহীদের আক্রমণে কোণঠাসা সামরিক বাহিনী। তাদের সমর্থকদের মনে এখন সন্দেহ ও হতাশা তৈরি হচ্ছে। দেশটির জনপ্রিয় এক ব্লগার সমপ্রতি মিন অং হ্লাইংকে ‘অযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের ৭৫ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে এ ধরনের বিপরীত ঘটনা নজিরবিহীন। জান্তার পদে পদে মনোবল ভেঙে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সেনা নিয়োগও কঠিন হয়ে উঠেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে এমপি সনির প্রথম আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভা
পরবর্তী নিবন্ধইউক্রেনের ৬৫ যুদ্ধবন্দি নিয়ে রুশ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত