আমি প্রতিনিয়ত কারণে অকারণে অগণিত মানুষের মুখোমুখি হই। আর এ সময়ে বিভিন্ন জনের চরিত্রের বৈশিষ্ট্যের নমুনা দেখে আমাকে প্রায়ই হতবাক তথা আশ্চার্যান্বিত হতে হয়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে উঁচু পদে অধিকাংশ মানুষের মুখের কথার সঙ্গে বাস্তবতার বিস্তর ফারাক দেখা যায়। এসব দেখে প্রতীয়মান হয় যে, ভালো মনের সৎ মানুষ কিছুটা হলেও হ্রাস পাচ্ছে, আর তাই হয়তো আমাদের মাঝে অশান্তি বা দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুখের কথার সঙ্গে কাজের মিল থাকলে আমাদের সমাজ–দেশ অনেকাংশে এগিয়ে থাকতো, হিংসাত্মক কার্যক্রম হ্রাস ও আন্তরিকতার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতো। কারণ যাঁদের কথায় গুরুত্বপূর্ণ অফিস, সমাজ বা দেশের মানুষ ওঠ–বস করে তাঁদের মধ্যে অনেক কম সংখ্যক এমন কুকর্মে জড়িত থাকলেও দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আমি মনে করি আমাদের প্রত্যেকের দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রম নিয়ে দিন শেষে নীরব নিস্তব্ধ জায়গায় বসে একাগ্রচিত্তে সৃষ্টিকর্তাকে সম্মুখে নিয়ে কিছু সময়ের জন্য হলেও আত্মসমালোচনা করা প্রয়োজন। অর্থাৎ সারা দিন কী কী কাজ সমাধা করেছি, তন্মধ্যে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্যায় বা ভুল কী করেছি, অন্যকে যে সব কাজ করার উপদেশ বাণী শুনিয়েছি অর্থাৎ অন্যায় কাজ করতে নিষেধ করেছি তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করেছি কিনা ইত্যাদির যোগ–বিয়োগ করলেই বুঝতে পারবো আমি নিজে কতটা স্বচ্ছ বা সৎ পথে জীবন যাপন করছি। এর ফলে আমার নিজের মন স্বচ্ছ হলে একই কাজে একাধিক বার ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না এবং মন অস্বচ্ছ হলেও ভয়ে একদিন সৎ পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য নিজের মনে সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্নীতি বা অন্যের সঙ্গে মনোমালিন্যের মূল কারণই হলো মুখের কথার সঙ্গে বাস্তবের মিল না থাকা। উঁচু পদের নেতা বা কর্মকর্তাগণের সৎ মন–মানসিকতা আমাদের দেশের উন্নয়নসহ জনগণের দুঃখ–দুর্দশা লাঘবে অত্যন্ত সহায়ক। তাই তো প্রতিটি ধর্মেই মুখের কথার সঙ্গে বাস্তবায়িত কাজ তথা মনের মিল রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর এমন কাজে ব্যর্থদের একাল ও সেকালের কঠোর শাস্তির কথাও বলা আছে। তাই আমাদের নিজের স্বার্থ রক্ষায় আত্মসমালোচনা করার মাধ্যমে মন্দ কাজ হতে দূরে থাকা এবং মুখে অন্যকে যা করতে নিষেধ করি তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা খুবই প্রয়োজন। এতে নিজের জীবন সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি দেশ ও দেশের মানুষও অনেকাংশে উপকৃত হবে।