মিতু খুনে প্রধান আসামি বাবুল

বাবুলের মামলায় তার বিরুদ্ধেই চার্জশিট ।। খুন করান পরকীয়া জেনে যাওয়ায় পিবিআইয়ের অভিযোগপত্রে আরো ৬ জনের নাম

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএনএইচসিআর কক্সবাজার কার্যালয়ের কর্মী ও ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। এর জেরে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর সঙ্গে শুরু হয় পারিবারিক কলহ। একপর্যায়ে স্ত্রীকে খুনের সিদ্ধান্ত এবং তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করে তা বাস্তবায়ন করা হয়। নিজেকে আড়ালে রাখতে এ হত্যাকাণ্ডকে জঙ্গিদের কাজ বলে প্রচার করেন তিনি। এসব তথ্য উল্লেখ করে গতকাল মঙ্গলবার মহানগর হাকিম আদালতে বাবুল আক্তারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক। মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল ৬ বছর আগে যে মামলা করেছিলেন তাতে তাকে প্রধান আসামি করে এই চার্জশিট দেয়া হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত বাকি ৬ জন হলেন মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম মুসা ও খায়রুল ইসলাম কালু। এর মধ্যে মুসা ও কালু পলাতক। ভোলা জামিনে আছেন। কারাগারে আছেন বাবুল আক্তার, ওয়াসিম, শাহজাহান মিয়া ও আনোয়ার হোসেন। পিবিআইয়ের চার্জশিটে ৫ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তারা হলেন আবু নছর, শাহজামান, সাইদুল ইসলাম সিকদার, নুরুন্নবী ও রাশেদুল ইসলাম। এর মধ্যে নুরুন্নবী ও রাশেদুল ইসলাম পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে আজাদীকে বলেন, ২০৮৪ পৃষ্ঠার ডকেট ও ২০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। সাক্ষী রাখা হয়েছে ৯৭ জনকে। আগামী ১০ অক্টোবর এটি গ্রহণ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে বাবুল আক্তারের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ আজাদীকে বলেন, চার্জশিট দাখিল করেছে বলে শুনেছি। তবে এখনো তা হাতে পাইনি। চার্জশিট দেখে করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। তিনি বলেন, বাবুল আক্তার এ হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত নন। ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের কেউ আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বাবুলের কথা বলেননি। আমরা আদালতের কাছে প্রতিকার চাইব। প্রয়োজনে ফের তদন্ত চেয়ে নারাজি পিটিশনও দাখিল করব।
২০ পৃষ্ঠার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাবুল আক্তার কঙবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখানে ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ কারণে স্ত্রী মিতুর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়। এর জেরে তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন বাবুল। একপর্যায়ে খুনিদের ৩ লাখ টাকায় ভাড়া করেন এবং মিশন শেষ করেন। বাবুলকে এ কাজে সহায়তা করেন তার বিশ্বস্ত সোর্স মুসা। পরে পরিকল্পনা মতো জঙ্গিরাই মিতুকে খুন করেছে বলে প্রচার করেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মিতু খুনের রহস্য উদঘাটন করা হয়।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন এ ঘটনায় বাবুল জড়িত বলে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বাবুল যা যা করেছেন সবটাই ছিল তার অভিনয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ। পরে নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুলের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। এরপর ধীরে ধীরে চাঞ্চল্যকর এই মামলার জট খুলতে থাকে।
আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ১২ মে মিতু খুনে বাবুলের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। একই দিন বাবুল আক্তারসহ ৮ জনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় নতুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। এর দুদিন আগে বাবুলকে ঢাকা থেকে ডেকে নিয়ে আটক করা হয়। পরে মিতুর বাবার করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ১৭ মে তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার কথা থাকলেও বাবুল জবানবন্দি দেননি। একপর্যায়ে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তখন থেকে বাবুল আক্তার কারাগারে রয়েছেন।
আদালত সূত্র আরো জানায়, মিতুর বাবার করা মামলাতে পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত সেটি গ্রহণও করেন। কিন্তু বাবুল আক্তারের করা মামলায় দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন নাকচ করেন। আদালত বলেন, মিতু খুনে বাবুলের করা মামলাটিই চলবে। সেখানেই তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হোক। মিতুর বাবার করা মামলার সব কাগজপত্র বাবুলের মামলার সাথে যুক্ত হোক বলেও আদালত আদেশ দেন। সেই হিসেবে বাবুলের করা মামলাটির তদন্ত শেষ করে পিবিআই বাবুলসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে তদন্ত হয়েছে : পিবিআই
পরবর্তী নিবন্ধদৈনিক শনাক্তের হার ফের ১০% ছাড়াল