মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে হালদায়

প্রস্তুত ডিম সংগ্রহকারীরা

হাটহাজারী প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৪ মে, ২০২১ at ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

এখন ডিম ছাড়ার মৌসুম। হালদা নদীতে বেড়েছে মা মাছের আনাগোনা। ইতোমধ্যে ডিম সংগ্রকারীরা ডিম আহরণের জন্য নৌকা, জালসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাছের আনাগোনা দেখে ডিম সংগ্রহকারী ও পোনা উৎপাদনকারীদের মধ্যে উৎসাহ, উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। নদীর দুই পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা প্রতিদিন মাছের আনাগোনা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। গত দুই দিন রাতে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির আলামত দেখে ডিম সংগ্রহকারীরা নদীর পাড়ে অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু আমাবস্যা, অষ্টমী কিংবা পূর্ণিমার তিথি/জো না থাকায় ডিম ছাড়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে অষ্টমীর জো শুরু হয়েছে। এরমধ্যে প্রবল বর্ষণসহ বৃষ্টিপাত হলেই ডিম ছাড়তে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ২৯ এপ্রিল জোয়ারের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়া সামান্য ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। তবে এ ডিমকে নমুনা ডিম বলতে নারাজ হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি বলেন, এখন মাছের পেট ভর্তি ডিম, হয়তো জোয়ারের প্রকোপে সামান্য ডিম ছেড়েছে।
ডিম সংগ্রহকারী গড়দুয়ারা কামাল সওদাগর, মধ্যম মাদার্শার আশু বড়ুয়া ও মছুয়া ঘোনার শফিউল আলম জানান, প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শেষ দিকে এবং মে মাসে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। গতবছর (২০২০ সালের) ২২ মে নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছিল। বাংলা বছরের চৈত্র বৈশাখ মাসে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে নদীতে ঢলের প্রকোপ বাড়লে মা মাছ ডিম ছাড়ে। এসময় ছাড়া ডিম গুণগত মানের দিক থেকে খুবই উৎকৃষ্ট। হালদা নদী থেকে সংগৃহীত ডিমের রেণু দ্রুত বর্ধনশীল বলে সারাদেশে এ রেণুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই মাছ চাষিরা প্রতিবছর হালদার রেণুর অপেক্ষায় থাকেন।
বছরজুড়ে নদী থেকে মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকা, নিয়মিত অভিযানে অবৈধ জাল জব্দ, বালু উত্তোলন বন্ধ, ড্রেজার পরিচালনা ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা বন্ধ থাকায় মা মাছের নিরাপদ বিচরণ নদীতে অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে। তাছাড়া নন্দীরহাট সংলগ্ন একটি পেপার মিল ও হাটহাজারীতে প্রতিষ্ঠিত ১শ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বর্র্জ্য হালদা নদীতে গিয়ে পড়া বন্ধ থাকায় মা মাছের ডিম ছাড়ার পরিবেশ এক প্রকার অনুকূলে ছিল। তাই গত বছর নদী থেকে ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহের রেকর্ড হয়েছিল। এ ডিম ছাড়ার পরিমাণ বিগত দশ বছরের মধ্যে সর্বাধিক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তদারকির ফলে নদীতে ডিম ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
হালদা নদীতে মাছের মজুদ বৃদ্ধির জন্য ২০০৭ সাল থেকে মৎস্য অধিদপ্তর নদীতে মাছ অবমুক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ করে ২০১৯ সাল থেকে নদীতে মাছ অবমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এজন্য হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন গতবছর হালদার ডিম থেকে রেণু উৎপাদন করে গড়দুয়ারা ইউনিয়নের একটি মডেল পুকুরে লালন পালন করে। যেগুলো ৭/৮শ গ্রাম ওজনের ৮ হাজারসহ ১০ হাজার মত পোনা নদীতে অবমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান ইউএনও মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুন হুদা রনি।
ইউএনও জানান, এবার বেশ কিছু কালিবাউশও অবমুক্ত করা হয়েছে। অবমুক্ত করা মাছগুলো তিন কেজি ওজনের হলে নদীতে ডিম ছাড়বে বলে আশা করছি।
আমাদের আমাদের

পূর্ববর্তী নিবন্ধবড় ব্যবধানেই হার
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় আ. লীগ নেতা হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার