মা, তোমার ওপরই বেশি নির্ভর করা যায়

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ১২ মে, ২০২৪ at ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

হেরিলে মায়ের মুখ/ দূরে যায় সব দুখ,/ মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,/ মায়ের শীতল কোলে/ সকল যাতনা ভোলে/ কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।’

মা, যার উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করা যায় পৃথিবীতে। মা মমতা ও ভরসার পরম আরাধ্য নাম। যার মুখের দিকে তাকালে মুহূর্তেই দূর হয়ে যায় সন্তানের সব দুঃখবেদনা। মাও দিনরাত সন্তানের ভবিষ্যৎ ভাবনায় উদ্‌গ্রীব থাকেন। নিজের শত দুঃখকষ্টের মাঝেও সন্তানকে আগলে রাখেন মা। আবার সন্তানের সাফল্যে গর্বে বুক ভরে ওঠে মায়ের। যা ফুটে ওঠে কবি নজরুল ইসলামের কবিতায়। তার ভাষায়, ‘দিবানিশি ভাবনা/ কীসে ক্লেশ পাব না,/ কী সে মানুষ হব, বড় হব কীসে;/ বুক ভ’রে ওঠে মা’র/ ছেলেরি গরবে তাঁর,/ সব দুখ সুখ হয় মায়ের আশিসে।

মা। একটি অক্ষর, ছোট্ট শব্দ। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ধ্বনি। কবি কাজী কাদের নেওয়াজ এর ভাষায়, ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি,/ কিন্তু জেনো ভাই,/ ইহার চেয়ে নামটি মধুর/ ত্রিভুবনে নাই’। শুধু মধুর নয়, মা শব্দের ব্যাপকতাও অনেক গভীর।

সন্তানের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠায় মায়ের যে ত্যাগতিতিক্ষা তার ঋণ কখানোই শোধ করা সম্ভব না। তাই তো বলা হয়, ‘মায়ের একধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম,/ পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না’। তাই তো মায়ের প্রতি সন্তানের হৃদয়ে সবসময় থাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। এ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় বা দিনক্ষণের প্রয়োজন নেই। এরপরও আজ মা’কে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতবে সন্তানরা। আজ মায়ের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাবে তারা। কারণ আজ বিশ্ব মা দিবস। মায়ের প্রতি হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসার আনুষ্ঠানিক প্রকাশের দিন আজ।

চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ পালিত হবে মা দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও উদযাপন করা হবে দিনটি। আজ দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে মাকে নিয়ে বিশেষ লেখা, টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠান। তবে আয়োজন করে কেবল একটি দিনে মা দিবস পালনে আপত্তি আছে অনেকের। প্রশ্ন আছে মা দিবসের বাণিজ্যিকীকরণ নিয়েও।

সন্তানের জন্যে কাঁদে অহোরাত্র মায়ের হৃদয়; সন্তানের মঙ্গলের জন্যে আর্দ্র, ব্যথিত দু’চোখে, শূন্যে দুই হাত তুলে মোনাজাত করে পাঁচবেলা!’ এরপরও কেবল নির্দিষ্ট একটি দিন কেন মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বরাদ্দ থাকবে? বরং মাকে ভালোবাসতে হবে প্রতিক্ষণ। অনেকে বলছেন, একটি বিশেষ দিনে মাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে ক্ষতি নেই। পাশাপাশি এ দিনে মায়ের অধিকার রক্ষায় শপথ নিতে হবে সন্তানকে। একইসঙ্গে অবহেলিত মাকে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে না পাঠানোর শপথ নিতে হবে। তবেই স্বার্থক হবে মা দিবস।

যেভাবে এল মা দিবস : আমেরিকায় জুলিয়া ওয়ার্ড হাও নামে একজন গীতিকার ১৮৭০ সালে মা দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। তখন আমেরিকায় চলছিল ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ। যুদ্ধে এক মায়ের সন্তান আরেক মায়ের সন্তানকে হত্যা করছিল অবলীলায়। এই হত্যাযজ্ঞ দেখে জুলিয়া ব্যথিত হন। তিনি এটা বন্ধ করার জন্য আমেরিকার সব মাকে সংঘবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক মা দিবস পালনে তার প্রস্তাব দেওয়ার এটাই ছিল কারণ। তিনি চেয়েছিলেন এই দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ১৮৭২ সালে জুলিয়া ওয়ার্ড মে মাসের দ্বিতীয় রোববার তার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন প্রথম মা দিবস পালন করেন।

মা দিবস নিয়ে একাধিক তথ্য পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন নথিপত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আয়োজন করে পালিত হচ্ছে দিবসটি।

তবে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জার্ভিসের উদ্যোগে দিবসটির যাত্রা শুরু হয়। অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’। নীরবে তিনি কাজ করতেন অনাথদের নিয়েও। ১৯০৫ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আনা মারিয়া মা দিবস প্রচলনের চেষ্টা করেন। ১৯০৮ সালে তিনি মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠানও করেন। এর প্রেক্ষিতে একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দেয়। তবে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। এরপরও নিজের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন আনা। সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষণা করেন।

মা দিবস প্রচলনের অন্য ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৬ শতকে ইংল্যান্ডে মা দিবস পালন করা হতো। দিবসটি তারা ‘মাদারিং ডে’ হিসেবে পালন করত। সেদিন থাকত সরকারি ছুটি। এদিন পরিবারের সবাই তাদের মায়ের সাথে কাটাতেন। যদিও দিবসটি অতটা প্রসারতা লাভ করতে পারেনি। তবে ১৬ শতকেরও আগে, এমনকি খ্রিস্টপূর্ব যুগেও মিশর, রোম ও গ্রিসে মা দিবস পালন করা হতো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫শ একর ভূমির প্রতীকী মূল্য পরিশোধ হবে আজ
পরবর্তী নিবন্ধএসএসসির ফল প্রকাশ আজ