মা ও মায়ের মন

হৈমন্তী তালুকদার | শুক্রবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

একজন নারী যখন শিশু হয়ে জন্ম নিয়ে এই পৃথিবীতে আসে তখনই সে মৃদুস্বরে অবহেলিত হয়। মেয়ে হলো! এই মেয়ে শব্দটা না থাকলে জানি না ছেলে শব্দটা হয়তো হারিয়ে যেতো মনুষ্যকূলও হারিয়ে যেতো। একজন মেয়ে তাঁর শৈশব থেকে কৈশোরে পা দিতেই নানা বিধিনিষেধ শুরু হয়ে যায়, এটা সমাজের নিয়ম নাকি নিয়মের নিয়ম জানি না, একজন মেয়েকে শুরু থেকেই তার শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে জীবনকে সামঞ্জস্য করে চলাটা শিখে নিতে হয়।এটাও তার সৃষ্টির নিয়ম। তাঁর ইচ্ছে অনিচ্ছা, দুরন্তপনায় বাধাটাও কিন্তু সমাজের চিরাচরিত নিয়মের নিয়মিত নিয়মই। এরপর যৌবনেও তার শতো নিয়ম, পুরুষ আর নারীর সবচেয়ে বড় ফারাকের এই দূষিত ফেনা ভাসতে শুরু করে দেয়, সমাজের রক্ত চক্ষু কপালে তুলে সবসময়ই নজরে রাখে এটাও তো সমাজেরই নিয়ম। এরপর বিয়ে, ঘোমটা পরা নিয়মের সাথেই হাজারো নতুন নিয়ম যেন তার গলাচিপা আর্তনাদ কেউ শুনেও শোনে না, এটাতো নিয়ম ওটাতো নিয়ম, এরপর মা হওয়ার আরেক পরিবর্তন, হলেও জ্বালা, না হলেও জ্বালা, ছেলে কেন নয়, মেয়ে কেন? বা এতো দেরী কেন? বা এতো জলদী কেন? বাচ্চা শুকনা কেন? মোটা কেন? কাঁদে কেন? এমন কেন? তেমন কেন?
একজন মায়ের কতোকিছু পরিবর্তন হয়, সেখানে সে হাসিমুখে সব করলেও তাকে একধরনের বিষন্নতা ঝাপটে ধরে, আসে আবার যায়,তাঁরচেনা বিষয়গুলো সব উল্টো পথে হাঁটে, সংসার, সন্তান সবকিছুই তাকে পারতে হবে, লেখাপড়াও শেষ করা চাই, অমুকে তো করলো। বদ্ধ জীবনে একটা মায়ের নীরব যুদ্ধটা কতো কঠিন তা বুঝেও বোঝেনা, এখানে খাওয়ার, বসার, ঘুমানোর সবকিছুই পরিবর্তন হয়। একজন পারলো তার মানে এই না সবাই পেরে উঠে, মুডসুইং বিষয়টা মা হওয়ার পর কম বেশি সবারই হয়, হঠাৎ একটা বিষয়ে ইমোশনাল হয়ে পড়ে, একেকজনে একেক পরামর্শ দিতেই থাকে, কেউ বুঝার চেষ্টা করে না, তার পরিচিত বিষয়গুলোকে সব ছাড় দিতেতো হচ্ছেই, বরং নিজেকে আয়নায়, পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে সবসময়ই সে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে, শুধু বলবো একজন কাছের মানুষকে সবসময়ই পজিটিভভাবে আশা করলেন কিছু সময় আপনার মনের মতো হলো কিন্তু হঠাৎ তাঁর আবেগের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেলো, একটু বোঝার চেষ্টা করবেন, আমরা যখন হাঁটি একটা নিয়ম, বসলে একটা নিয়ম, যখন গাড়িতে একই মানুষটা উঠি, আমরা সামনে ঝুঁকে যাই, এটা আমাদের পরিস্থিতিতে বিভিন্নভাবে গতিপথ পরিবর্তন হয়, ঠিক তেমনি মনেরও অনেক পরিবর্তন হতে হয়, সাগরের বিশালতায়, পাহাড়ঘেরা সবুজে কখনো একজন মাকে নিয়ে গিয়ে দেখবেন সে যেন সোনার হরিণ পাওয়ার মতো আনন্দিত হবে, মুক্ত হাওয়া একজন মায়ের মন থেকে সকল একঘেয়ে দূর করে দেয়। মানুষের শরীরের যত্নের জন্য কতো কি আয়োজন, আচ্ছা মনের জন্য কোন বিশেষ যত্ন আমরা কি ভাবি? মনেরও শরীর খারাপ হয়। শরীর ও মনের যত্ন নিন সমভাবে। শরীরের জন্য ঔষধ লাগে, মনের জন্য লাগে একটা আন্তরিক মন, যে আপনার মন ও শরীরের জন্য ওষুধের মতো কাজ করবে। সুস্থ থাকেন সকলকেই নিয়ে, কাছের মানুষগুলোকে সুস্থ রাখেন। আদর ভালোবাসা ও সময় দিয়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার একটুকরো সময় সবচেয়ে বড় উপহার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমুকুলের বেড়ে ওঠা
পরবর্তী নিবন্ধইসলামী জ্ঞান-জিজ্ঞাসা