মায়ের আঁচল

শিপ্রা দাশ | বৃহস্পতিবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

এক মায়াবী অনুভূতি হল মায়ের আঁচল। আজকের প্রজন্মের বাচ্চারা যে অনুভূতি থেকে বঞ্চিত। আচলের সুখ কী তা এই প্রজন্মের বাচ্চারা জানেনা। আমরা মায়েরা এখন বাড়িতে নিত্য শাড়ি পরা ছেড়ে দিয়েছি। মায়ের আঁচল এর মূলনীতি ছিল মাকে মর্যাদা দেওয়া। আঁচল শিশুদের ঘাম মুছাতে, চোখের জল মুছাতে। স্নানের পরে আঁচল দিয়ে গা মুছিয়ে দেওয়া। নোংরা কান, মুখ পরিষ্কার করার জন্যও ব্যবহৃত হত। মাও আঁচলকে গামছা হিসেবে ব্যবহার করতো। খাবার খেয়ে মায়ের আঁচলে হাত ও মুখ মুছে নেওয়া আমাদের খুশির বিষয় ছিল। কখনো চোখে কিছু পড়লে মা তার আঁচলকে গোল করে পাকিয়ে তাতে ফুঁ মেরে গরম করে চোখের উপর ধরে রাখতেন। সমস্ত ব্যথা নিমেষে উধাও হয়ে যেত। মায়ের কোলটি ছিল ঘুমন্ত শিশুর জন্য গদি, আর মায়ের আঁচলটি বাচ্চাকে দেখে নেওয়ার জন্য চাদর হিসাবে কাজ করতো। যখনই কোনও অচেনা লোক বাড়িতে আসত, শিশুটি মায়ের আঁচলের একটি আড়াল নিয়ে তাকে দেখত। শিশু যখনই কোনও বিষয়ে লজ্জা বোধ করত, তখন সে ওই আঁচল দিয়ে মুখটি ঢেকে রাখত এবং আঁচলের ভিতর লুকিয়ে পড়ত। মায়ের সাথে বাচ্চারা বাইরে গেলে তখন মায়ের আঁচল গাইড হিসাবে কাজ করতো। যতক্ষণ শিশুটির হাতে মায়ের আঁচল ধরা থাকতো যেন পুরো জগৎ তার হাতের মুঠোয় থাকতো। লাইনে শীতকালে কোলের বাচ্চা কে মা আচল দিয়ে চারপাশে জড়িয়ে শীতে থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতেন। আঁচল এপ্রোন হিসেবেও কাজ করতো। আঁচলে মুড়ি মোয়া নিয়ে খাওয়া হতো। উনুন থেকে গরম কোন পাত্র নামানোর সময়, আঁচল দিয়ে গরম পাত্রটি ধরতেও কার্যকর ছিল। আঁচল ঘরে রাখা জিনিস থেকে ধুলো মুছে ফেলতেও খুব সহায়ক ছিল। আঁচলের কতো মহিমা। আঁচলের গিঁটে মা একটি চলন্ত ব্যাংক সঙ্গে রাখতেন। আমার মনে হয় না বিজ্ঞান এত উন্নতি করার পরেও আঁচলের বিকল্প কিছু খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমাদের ব্যবহারের মাধ্যমেই বদলাতে হবে সমাজ
পরবর্তী নিবন্ধনারীর এগিয়ে যাওয়ায় প্রতিবন্ধকতা