আজ দিবাগত রাত লাইলাতুল কদর। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুন’ অর্থ রাত এবং ‘কদর’ অর্থ সম্মান। ‘লাইলাতুল কদর’ অর্থ সম্মানের রাত। এই রাত অতিশয় সম্মানিত ও পুণ্যময় হেতু ‘লাইলাতুল কদর’ নামে অভিহিত। পবিত্র কোরআনের একটি সূরাই এই রাতের তাৎপর্যের উপর নাযিল হয়েছে। যার নাম সূরা কদর। সূরা কদরে মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, আমি ইহা (পবিত্র কোরআন) কদরের রাতে নাযিল করেছি। তুমি কি জান কদরের রাত কি? কদরের রাত হল এমন রাত, যা হাজার মাসের অপেক্ষায় উত্তম। এই রাতে ফেরেশতাগণ এবং আল্লাহর রূহ (হযরত জিবরাঈল (আ.)} রহমত, বরকত ও শান্তি নিয়ে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়ে থাকেন। এভাবে প্রভাত উদয় হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে।
হযরত রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বনি ইসরাঈলদের মধ্যে এক ব্যক্তি এক হাজার মাস আল্লাহর পথে জেহাদে লিপ্ত ছিলো। একথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) অবাক হয়ে গেলেন এবং আফসোস করতে লাগলেন–আমরা তো এরকম সুযোগ পাবো না। তখন উপরোক্ত সূরা নাযিল হয়। অন্য এক বর্ণনায় মহানবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বনি ইসরাঈলের এক ব্যক্তি সারা রাত ইবাদত করতেন এবং সারাদিন ধর্মের দুশমনদের সঙ্গে যুদ্ধ করতেন। এভাবে তিনি এক হাজার মাস সময় অতিবাহিত করেছিলেন। এই ঘটনা শুনে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আফসোস করেন। তখন সূরা কদরের আয়াত গুলো নাযিল হয়।
হযরত জিবরাঈল (আ.) ও অন্যান্য অসংখ্য ফিরিশতা আল্লাহর নির্দেশে এই রাতে পৃথিবীতে আগমন করেন। আগমন করে মুমিন মুসলমানদের ঘরে গমনপূর্বক প্রত্যেক নারী–পুরুষকে আল্লাহ তা’লার পক্ষ হতে সালাম ও শান্তির ্বাণী জ্ঞাপন করেন। আল্লাহর বিশিষ্ট বান্দারা এই রাতে অশেষ শান্তি এবং মাধুর্য উপভোগ করে থাকেন। সূর্যাস্ত হতে ফজর পর্যন্ত সারা রাত আল্লাহর রহমত মুষলধারে বর্ষিত হয়ে থাকে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে বর্ণনা আছে এই মহান রাতে আল্লাহ তা’লা অসংখ্য পাপীকে ক্ষমা করেন। এবং তিনি প্রথম আসমানে আগমন করে ডেকে ঘোষণা করেন, কে আছ ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তার ডাকে সাড়া দেব।
কদরের রাতের এই বিপুল মর্যাদা লাভের বিশেষত কারণ এই যে, কোরানুল করিম এই রাতে হাকিকতে কোরআন মাকাম থেকে লওহে মাহফুজে স্থানান্তরিত হয়। অতঃপর কালক্রমে প্রথম আসমানে এবং পৃথিবীতে অবতীর্ণ হতে থাকে। শুধু কোরআনুল করিম নয়, পূর্ববর্তী–সকল আসমানী গ্রন্থসমূহও এই রমজানে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইব্রাহীম (আ.) –এর সহিফাসমূহ ৩ রমজান নাযিল হয়। তাওরাত শরীফ ৬ রমজান মূসা (আ.)-এর উপর নাযিল হয়। ইনজিল শরীফ হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর ১৩ রমজান নাযিল হয় এবং যবুর শরীফ হযরত দাউদ (আ.) এর উপর ১৮ রমজান অবতীর্ণ হয়।
দার্শনিক আল্লামা মোহাম্মদ ইকবাল বলেছেন, ‘আমরা মনে করতে পারি যে, রমজান মাসের এক মাস সিয়াম পালন করে কোরআনে করীমের জন্মবার্ষিকী পালন করার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যার ফলে আল্লাহর হুকুমের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের প্রতি সকল সময় খেয়াল থাকে।’