বর্ষ পরিক্রমায় রমজান বিবিধ গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আসে মুসলিম জাহানে। রমজানের রোজা দ্বারা অর্জন হয় তাকওয়া, ত্যাগ, সংযম, আত্মশুদ্ধি সর্বোপরি আল্লাহ পাকের নৈকট্য। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে সৎ ও যোগ্যজন হিসেবে স্বীয় জীবনকে গড়ে তোলার, কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার এবং রাষ্ট্রের হিতজন বা আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ দিয়েছেন। কৃত পাপের জন্য অনুসূচনা করার সুযোগ দিয়েছেন।
রমজান মাস নফসের সাথে যুদ্ধ করার মাস। মানুষের নফস মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দাসত্ব থেকে ফিরিয়ে নিজের দাস বানাতে চায়। নফস যখন মানুষকে গোলাম করে তখন সে গোলাম দ্বারা যা ইচ্ছা তা করতে পারে। পরকালের পুণ্যের পরিবর্তে ইহকালের লোভ লালসায় আটকে থাকে। একত্ববাদ থেকে ফিরে শিরিকের প্রতি ধাবিত হয়। মানুষ তখন আর আল্লাহর বিধান মেনে চলতে পারে না এবং সত্যকে গ্রহণ করতে পারে না। সে নফসের দাসত্বের মাধ্যমে স্বীয় শরীর মন–প্রাণ জাহান্নামের খাদ্য গড়ে তোলে। মানব জাতি যদি ইহজগত ও পরজগতের শান্তি চায় তাহলে তাকে নফসের দাসত্ব ছেড়ে আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ করতে হবে। সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে আল্লাহর দাসত্ব অর্জন করাই মুসলমানদের সহজ পথ।
রমজান মাস আল্লাহ পাকের আনুগত্য করার জন্য প্রতিটি মুহুর্তই অত্যন্ত মূল্যবান। আল্লাহর আনুগত্যের জন্য ধৈর্যের অনুশীলন প্রয়োজন। ধৈর্যই হচ্ছে সিয়ামের প্রাণ। পবিত্র ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ধৈর্য্যের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন। বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ঈমাম গাজ্জালী (রাহ.)’র বর্ণনা অনুযায়ী ঈমানের মূল ভিত্তিই হচ্ছে ধৈর্য।
ধৈর্য অনুশীলনের মাধ্যমে রমজান মাসে মুমিন মুসলমানগণ পরিপূর্ণভাবে ইবাদতে নিয়োজিত থাকে। রোজার ইবাদতের মধ্য দিয়ে মুমিনদের আর্থ–সমাজিক উন্নয়নও ঘটে। এ মাসের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সব বিধান মুসলমানদের উপর প্রয়োগ করেছেন সেগুলো সম্পূর্ণরূপে পালন করলে এবং তাঁর প্রেরিত রাসুল হযরত মুহম্মদ মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে রমজান মাসটি অনুশীলন করেছেন, সেভাবে এই পবিত্র মাসটি কাটালে পবিত্র কোরআন পাকে ঘোষিত ‘তাকওয়া’ অর্জন করা যায়। আর মুমিনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা।