মাহে রমজানের রোজা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সবকিছুকে আয়নার মতো পরিষ্কার করার উপায়। রিপুকে ধ্বংস করে হিংস্র স্বভাবকে নিজ আয়ত্বে রাখার বিধান। মানব জাতির সামাজিক জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার পন্থ্থা রোজার মধ্যে লুকায়িত রয়েছে।
উর্দু ভাষার অন্যতম কবি আল্লামা ইকবাল মাহে রমজানের রোজা সম্পর্কে বলেছেন, ব্যক্তিগতভাবে রোজা পালন করলে যে উপকার সাধিত হয়, তা একাধারে একমাস না রেখে মাঝে মাঝে রাখলে অথবা রমজানে না রেখে বছরের যে কোন মাসে রাখলেও তা সাধিত হতে পারে। আমরা তাই সঠিক বলে মনে করতাম, যদি কেবল মাত্র কোন ব্যক্তি বিশেষের আত্মাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার উদ্দেশ্য থাকত রোজার। কোন ব্যক্তি বিশেষকে নয় বরং একটি জাতিকে সুসংহত ও সুষ্ঠুপথে পরিচালিত করার জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন একাধারে রমজানের পুরো রোজা ফরজ করেছে।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোজা মানুষের জন্য ঢাল স্বরূপ। অন্যায়, অসুন্দর পাপ কাজ থেকে আত্মরক্ষার জন্য, দোজখের শাস্তি থেকে মুক্তি লাভের জন্য রোজা ঢাল স্বরূপ। ঢাল দ্বারা মানুষ যেভাবে আত্মরক্ষা করে তেমনিভাবে রোজা দ্বারা শয়তানের আক্রমণ থেকেও আত্মরক্ষা করা যায়। প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যতক্ষণ না সেই ঢালকে ধংস করে। অন্য এক হাদিসে বর্ণনা আছে প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম! রোজা কিভাবে বিনষ্ট হয় ? তিনি ইরশাদ করেন, মিথ্যা ও পরনিন্দা দ্বারা রোজার ঢাল নষ্ট হয় এবং রোজার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। অতএব, রোজাদারকে মিথ্যা ও পরনিন্দা প্রভৃতি পাপ কর্ম থেকে দূরে থাকতে হবে।
এক রেওয়াতে বর্ণনা আছে, কিয়ামতের দিন জালিমের নেকী মজলুম নিয়ে যাব। কিন্তু রোজার নেকীর কথা অন্যরা জানতে পারবে না। আমাদের দ্বারা অন্যের হক নষ্ট করার তো কোন সীমা নেই, যখন কিয়ামতের দিন আমাদের সকল নেকী অন্যেরা নিয়ে যাবে। তখন এই রোজাই জাহান্নামের আগুন থেকে ঢালের ন্যায় রক্ষা করবে। এই নেকীই নিজের থাকবে। আলহামদুলিল্লাহ।