মাহে রমজানের বিশেষ তিনটি আমল গুনাহ মাফের অন্যতম মাধ্যম

ফখরুল ইসলাম নোমানী | শুক্রবার , ১৪ মার্চ, ২০২৫ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

রমজানের রোজার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়। রোজার সঙ্গে গুনাহ মাফের সম্পর্ক খুব গভীর। রমজান মাসে মাগফিরাতের অগ্নিশিখায় জ্বালিয়ে দেয় বান্দার সব পাপ। গুনাহ মাফের বিশেষ তিনটি আমল: () রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশা রেখে রমজানের সিয়াম রাখে তার পূর্বেকার পাপরাশি মাফ হয়ে যায়। () ক্বিয়ামুল লাইল তথা তারাবির নামাজ। () লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত যা রমজান মাস ব্যতীত বছরের আর কোনো মাসে পাওয়া যায় না। পাপ ক্ষমার সর্বোত্তম মাস হলো রমজান। রমজানের দিনগুলোতে আমরা যদি একান্তই আল্লাহর জন্য রোজা রাখি এবং নিজের দোষত্রুটির ক্ষমা চাই তাহলে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন এবং অতীতের সব গুনাহও ক্ষমা করবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন মজিদে এরশাদ করেন আর তিনিই (আল্লাহ) তার বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন। (সুরা আশশুরা : ১৫)

রমজান মাসের বিশেষ তিনটি আমল :

() ফরজ সিয়াম (রোজা) মহান আল্লাহ যা শুধু রমজান মাসেই মুসলিম জাতিকে দান করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশা রেখে রমজানের সিয়াম রাখে তার পূর্বেকার পাপরাশি মাফ হয়ে যায়।

() ক্বিয়ামুল লাইল তথা তারাবির নামাজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশা রেখে তারাবির নামাজ আদায় করবে তার পূর্বেকার পাপরাশি মাফ হয়ে যাবে। রসুল (সা.) বলেন যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবি নামাজ আদায় করে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।

() লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত যা রমজান মাস ব্যতীত বছরের আর কোনো মাসে পাওয়া যায় না। এ রাত হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। এই রাতে মহাগ্রন্থ আলকোরআন নাজিল হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি শবে কদরে ক্বিয়ামুল লাইল করবে ঈমান ও এহতেছাবের সঙ্গে আল্লাহপাক তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন ও কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন তার জীবনের আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।

পাপ ক্ষমার সর্বোত্তম মাস হলো রমজান। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন যে বান্দা খোদার পথে এক দিন রোজা রাখে আল্লাহতায়ালা তার চেহারা থেকে আগুনকে দূরে সরিয়ে দেন। একবার মহানবী (সা.) বললেন ফেরেশতা রোজাদারের জন্য দিনরাত ইস্তিগফার করতে থাকে। এ ছাড়া হাদিসে এ বিষয়ে আরও বর্ণিত হয়েছে যে হজরত আবদুর রহমান বিন আওফ (রা.) বর্ণনা করেন হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইমানের সঙ্গে সওয়াব এবং এখলাসের সঙ্গে ইবাদত করে সে নিজ গুনাহ থেকে এভাবে পবিত্র হয়ে যায় যেভাবে সেদিন সে তার মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম লাভ করেছিল। যে ব্যক্তি ইমানের সহিত সওয়াবের নিয়তে শবে কদরে ইবাদত করবে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। রমজানের দিনগুলোতে আমরা যদি একান্তই আল্লাহর জন্য রোজা রাখি এবং নিজের দোষত্রুটির ক্ষমা চাই তাহলে তিনি ক্ষমা করবেন শুধু ক্ষমাই করবেন না বরং আমাদের পূর্বেকার সব পাপও ক্ষমা করবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন তিন ব্যক্তির দোয়া বাতিল করা হয় না তাদের একজন হলো সিয়াম পালনকারী যতক্ষণ না সে ইফতার করছে।

রমজানের পাঁচটি সুন্নত পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে। যথা : . সাহ্‌রি খাওয়া ২. ইফতার করা ৩. তারাবিহর নামাজ পড়া ৪. কোরআন তিলাওয়াত করা ও ৫. ইতিকাফ করা। যাঁরা কোরআন তিলাওয়াত জানেন না তাঁরা শেখার চেষ্টা করবেন। যাঁরা তিলাওয়াত জানেন তাঁরা শুদ্ধ করে তিলাওয়াত করার চেষ্টা করবেন। যাঁরা বিশুদ্ধ তিলাওয়াত জানেন তাঁরা অর্থ বোঝার চেষ্টা করবেন। যাঁরা তরজমা জানেন তাঁরা তফসির অধ্যয়ন করবেন।

রমজানের আরও তিনটি আমল হলো : . কম খাওয়া ২. কম ঘুমানো ও ৩. কম কথা বলা। হারাম থেকে বেঁচে থাকা চোখের হেফাজত করা, কানের হেফাজত করা, জবানের হেফাজত করা। রমজানের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত হলো ইতিকাফ। রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করা সুন্নতে মুআক্কাহ কিফায়া। এর কম সময় ইতিকাফ করলে তা নফল হিসেবেই গণ্য হবে। পুরুষেরা মসজিদে ইতিকাফ করবেন। নারীরাও নিজ নিজ ঘরে নির্দিষ্ট কক্ষে ইতিকাফ করতে পারবেন।

বান্দার গুনাহ মাফের বিশেষ আমল : . পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ জামাতে আদায় : ফরজ ও নফল নামাজ পুরো বছরের নিয়মিত আমল হলেও রমজানে এর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন মুসলমানেরা। অনেকে পুরো বছরে কখনো কখনো নামাজ আদায়ে গড়িমসি করলেও রমজানে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। রমজানে নামাজ পড়লেও অনেকে জামাতে নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেন না। অথচ জামাতে নামাজ আদায়ের সওয়াব অন্য যেকোনো আমলের তুলনায় বেশি। জামাতে নামাজ আদায়ের ফজিলত সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেন জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি মর্যাদার।

. কোরআন তিলাওয়াত : রমজানের প্রাণ হলো কোরআন। এই মাসেই কোরআন নাজিল হয়েছে। রাসূল (সা.) নিজেও এই মাসে কোরআন তিলাওয়াত করতেন বেশি বেশি। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এই মাসে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা। অন্তত প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা বা কিছু সময় হলেও কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত।

. তারাবি, নফল, সুন্নত নামাজ ও ইবাদত : রমজানের বিশেষ ইবাদত রাতের তারাবি নামাজ। এশার নামাজের পর এই নামাজ আদায় করা হয়। তারাবির সঙ্গে অন্যান্য নফল, সুন্নত নামাজ ও ইবাদতগুলোও নিয়মিত আদায় করা উচিত। রসুল (সা.) বলেন যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবি নামাজ আদায় করে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।

. তাকওয়া অর্জনই রমজানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : আল্লাহতাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ও প্রতি আশা করা যায় যে তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে (সুরা বাকারার : ১৮৩ : আয়াত)। রমজান হলো তাকওয়ার প্রশিক্ষণ। তাকওয়া অর্জনই রমজানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

. মাহে রমজানে গুনাহ মাফের সময় : পবিত্র রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে বান্দার দোয়া কবুল হয়। যেমন ইফতারের আগমুহূর্তে। এই সময়গুলোতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা এবং অতীত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা আবশ্যক। রাসুল (সা.) বলেছেন তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না, ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যতক্ষণ না সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া। তাই আমাদের উচিত রমজানে হতভাগা না হয়ে তাওবা করে নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়া। আমীন।

লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলজ্জিত সত্তা
পরবর্তী নিবন্ধকালের সাক্ষী পটিয়া: একটি জীবন্ত ইতিহাস