সাতকানিয়ায় বাজালিয়ার মাহালিয়া খাল পুনঃখনন হওয়ায় উপকৃত হবে এলাকার হাজারো কৃষক। পুনঃখননকৃত খাল দিয়ে বর্ষাকালে পুরো মাহালিয়ার পানি দ্রুত নিষ্কাশন হবে। ফলে মাহালিয়া এলাকার যেসব জমিতে বর্ষাকালে স্থায়ী জলাবদ্ধতা থাকতো সেসব জমি এখন আমন চাষের আওতায় আসবে। এছাড়া খননকৃত খালের দুই পাশের জমিগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে বোরো চাষের পাশাপাশি রবিশস্যে সহজে সেচ দিতে পারবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপির নির্দেশনা ও বরাদ্দের ভিত্তিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ভূ–উপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাহালিয়া খালের পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন করেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ ভরাট হয়ে থাকা মাহালিয়া খাল পুনঃখনন হওয়ায় এলাকার কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একদিকে বর্ষাকালে স্থায়ী জলবদ্ধতা নিরসন, অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে জমিতে সেচের ব্যবস্থা হবে। ফলে এলাকার কৃষকরা মহাখুশি।
এলাকার কৃষকরা জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বাজালিয়ার মাহালিয়া এলাকার বিলে হাঙ্গরখাল দিয়ে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসে। বর্ষায় পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি হলেই হাঙ্গরখাল দিয়ে নেমে আসা ঢলে পুরো মাহালিয়ার আবাদি জমিগুলো তলিয়ে যায়। মাহালিয়া খালটি দীর্ঘদিন যাবৎ ভরাট হয়ে যাওয়ায় হাঙ্গরখাল দিয়ে আসা পানি নিষ্কাশন হতে পারতো না। ফলে মাহালিয়া ও আশপাশের বিলগুলোতে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো। জলবদ্ধতার ফলে আমন মৌসুমে এলাকার জমিগুলো অনাবাদি পড়ে থাকতো। বিষয়টি নজরে আসার পর শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি মাহালিয়া খালটি পুনঃখননের জন্য বিএডিসিকে নির্দেশ প্রদান করেন। এরই ভিত্তিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন খাল পুনঃখনন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি জানান, মাহালিয়া খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে হাঙ্গরখাল দিয়ে আসা পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারতো না। ফলে মাহালিয়া ও আশপাশের বিলগুলোতে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো। জলবদ্ধতার কারণে এলাকার অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো। ফলে মাহালিয়া খালটি পনঃখনন করা হয়েছে। খালটি এমন ভাবে পুনঃখনন করা হয়েছে যাতে হাঙ্গরখাল দিয়ে আসা পাহাড়ি ঢল মাহালিয়া খাল দিয়ে দ্রুত গরলাখালে চলে যাবে। আর গরলাখাল হয়ে পানি দ্রুত সাঙ্গু নদীতে চলে যাবে। এছাড়া খালের পানি দিয়ে শুস্ক মৌসুমে ওই এলাকার রবিশস্যগুলোতে সহজে সেচ দিতে পারবে। খালের দুই পাশে ১০ ফুট প্রস্থ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে করে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল গাড়িতে করে ঘরে নিয়ে যেতে পারে।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, মাহালিয়া খালটি পুনঃখনন হওয়ার ফলে জলবদ্ধতার কারণে অনাবাদি পড়ে থাকতো এরকম অনেক জমি আমান চাষের আওতায় আসবে। এছাড়া শুস্ক মৌসুমে বোরো চাষের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং খালের দুই পাশের জমিগুলোতে সেচ দিতে পারবে।
বিএডিসি সাতকানিয়া ইউনিটের উপ–সহকারী প্রকৌশলী মো. ইকবাল হোসেন জানান, মাহালিয়া খালটি দীর্ঘদিন যাবৎ ভরাট হয়ে গিয়েছিল। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নির্দেশনা মোতাবেক পূর্ব মাহালিয়া তিন খালের মুখ নামক স্থান থেকে মাহালিয়া খালটি পুনঃখনন করা হয়েছে। মাহালিয়া খালের পাশাপাশি গরলাখালের কিছু অংশসহ মোট ৩ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। খালটি এমনভাবে খনন করা হয়েছে যাতে করে হাঙ্গরখাল দিয়ে আসা পাহাড়ি ঢল দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্কাশন হবে। ফলে মাহালিয়া এলাকায় জলবদ্ধতা থাকবে না। আগামীতে গরলাখালের পুরো অংশ খনন করা হবে।
বাজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত জানান, ভরাট হয়ে যাওয়া মাহালিয়া খাল এলাকার মানুষের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হাঙ্গরখাল দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল পুরো মাহালিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করতো। মাহালিয়া খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় এলাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্যার সৃষ্টি হতো। এখন খালটি পুনঃখনন হওয়ায় মহালিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না। জমিগুলোতে আমন চাষ করতে পারবে। খাল পুনঃখনন হওয়াতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হয়েছে এলাকার কৃষকের। জলাবদ্ধতার ফলে অনাবাদি পড়ে থাকা জমিগুলো চাষের আওতায় আসবে। শুষ্ক মৌসুমে বোরো চাষের পাশাপাশি সবজি খেতে সেচ দিতে পারবে। খালের দুই পাশে ১০ ফুট করে রাস্তা রাখায় উৎপাদিত ফসল গাড়িতে করে সহজে নিয়ে যেতে পারবে। খালের পাড়ের দুই পাশের রাস্তাগুলো আগামীতে সলিন করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
মাহালিয়া এলাকার কৃষক ছাবের আহমদ, নুরুল কবির ও মো. ইলিয়াছ জানান, মাহালিয়া খালটি পুনঃখনন হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের অনেক উপকার হয়েছে। হাঙ্গরখাল দিয়ে আসা পানি আমাদের জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করবে না। খননকৃত মাহালিয়া খাল দিয়ে দ্রুত নেমে যাবে। বর্ষাকালে আমাদের জমিগুলো এখন আর পানির নিচে পড়ে থাকবে না। আমন মৌসুমেও জমিতে লাঙল চলবে। খালটি পুনঃখনন হওয়ায় এলাকার কৃষকরা বেশ উপকৃত হয়েছে। জলাবদ্ধতা থাকা জমিতে এখন আবার ফলবে ফসল।