মাহবুব উল আলম চৌধুরী (১৯২৭–২০০৭)। কবি, সাংবাদিক, লেখক, ভাষা সৈনিক এবং ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতার রচয়িতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্তরে (২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২) আন্দোলনকারী ভাষা সৈনিকদের ওপর পুলিশের গুলি এবং ছাত্র নিহত হওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদস্বরূপ কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী ‘একুশে’ শিরোনামে রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি’ যা ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা হিসেবে স্বীকৃত। কবিতাটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল খালেক সম্পাদিত কোহিনুর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্ম ৭ নভেম্বর ১৯২৭, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে। তিনি গহিরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ডিসটিংশন সহ এন্ট্রান্স পাশ করেন। এবং চট্টগ্রাম কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালে রাজনৈতিক কারণে কলেজ ত্যাগ করেন। ১৯৪২ সালে চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র কংগ্রেসে যোগ দেন। মাহবুব উল আলম ১৯৪৫ সালে বিভাগপূর্ব ভারতে ’ছাত্র ফেডারেশন’ নামে একটি মুসলিম ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলকারী বিপ্লবীদের জেল থেকে মুক্তির সম্মানে জে এম হলে আয়োজিত সভার সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। একই বছর দাঙ্গা বিরোধী শান্তি কমিটি গঠিত হলে মাহবুব উল আলম উক্ত দাঙ্গা বিরোধী কমিটিতে সক্রিয় অংশ নেন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আহবান নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ করেন। তিনি এ ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে ১৯৪৬ সালে ‘বিপ্লব’ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে মাহবুব উল আলম চৌধুরীর সম্পাদনায় (১৯৪৭–১৯৫২) চট্টগ্রাম থেকে ‘সীমান্ত’ নামে প্রগতিশীল মাসিক পত্রিকার যাত্রা শুরু হয়। মাহবুব উল আলম ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে গহিরা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত (১৯৭২–১৯৮২) দৈনিক স্বাধীনতা পত্রিকা এর সম্পাদকীয় পর্ষদের সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রামের প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কৃষ্টি কেন্দ্র এবং মাসিক সাহিত্য বৈঠক প্রতিষ্ঠায় অন্যতম সংগঠক ছিলেন মাহবুব উল আলম। তিনি ১৯৭২ সালে সপরিবারে ঢাকায় স্থায়ী হন। বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে তাঁকে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করে। মাহবুব উল আলম চৌধুরী ২০০৭ সালের ২৩ শে ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।