মহান শিক্ষকতা পেশায় — ত্রিশবছরে আমার যত ছাত্রছাত্রী পেয়েছি সবাইকে এই একটি বিষয়ে তালিম দিয়েছি। মানুষ”কে ধর্ম বর্ণ গোত্র ও অর্থের মাপকাঠিতে না মেপে মানুষ ভাবতে শেখা উচিত। রোগ থেকে বাঁচার জন্য চিকিৎসার সময় কী হিন্দু ডাক্তার/মুসলমান ডাক্তার বাছবিচার হয়? একজন সিরিয়াস রোগীর তাৎক্ষণিক রক্ত প্রয়োজন।হিন্দু মুসলমান যাচাই করে কী রক্ত দেয়া/ নেয়া চলে! শিক্ষাগ্রহণের সময় হিন্দু শিক্ষক/ মুসলমান শিক্ষক বাছবিচার হয়? কোন কৃষক ফসল/ সবজী ফলাল বাছবিচার হয়? পুকুরের মাছটা হিন্দু ধরল না মুসলমান ধরল বাছবিচার হয়? না, হয় না–কে শোনে কার কথা- পারলৌকিক জগতে যাবার আগেই ইহলৌকিক জগতে আত্মাকে সংকীর্ণ করে ভেদবুদ্ধিতে যবন, কাফের, বিধর্মী, পাপ পুণ্যের হিসেব কষা হচ্ছে! এতে মানবতা যে কতটা ধূলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একদল হিংসুটে গোঁড়া ধর্মান্ধ স্বার্থপর অশান্ত সংকীর্ণ হিংস্র রুচির দোপেয়ে জীব মানুষের দেহ ধারণ করে ধর্মীয় লেবাস পরে সুন্দর পৃথিবীটাকে অসুন্দরের আস্তানা বানিয়ে ছাড়ছে। মহাতামাশা ও মহাতমসার মধ্যে কতগুলো সহজ সরল অসহায় মানুষকে প্রতিনিয়ত এমন এক বিভ্রান্তির পথে হাঁটানো হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ধর্মপালন বিষয়টি আত্মার অমৃততত্ত্বের নির্দেশনা।
আর মহামূল্যবান বিষয়টিকে উল্টো বুঝে আজকাল শুধু প্রদর্শনের জন্য ও চর্মচক্ষুতে মহৎ সাজার মহড়া চলছে দিনেরপরদিন। কিন্তু দিনশেষে কী ফলাফল! ধর্ষণ, খাবারে বিষ, পানিতে বিষ, ঠকবাজি, প্রতারণা, তদবির ঋণখেলাপি, দায়িত্বে অবহেলা, মাদকাসক্তি, নারী নির্যাতন, মানবতাবোধ বিবর্জিত, লোভী, পরদ্রব্য আত্মসাৎ, ক্ষমতার আধিপত্যে মানুষের জীবন নিয়ে অবহেলা করা, এসব বিষয় নিয়ে সবাই একাত্ম হই–এখানেই মানবতার মহত্ত্ব জড়িয়ে আছে পুরোপুরি। লোক দেখানো আর আড়ম্বরসর্বস্ব ধর্মে মতি আত্মপ্রবঞ্চনারই নামান্তর। এসব যন্ত্রণায় জ্বলছি নিরন্তর, প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের কোন উপায় নেই।