মানবকল্যাণ সুনিশ্চিত করাই হোক ঈদে মিলাদুন্নবীর (দ.) শিক্ষা

| বৃহস্পতিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৯:০৮ পূর্বাহ্ণ

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (.) বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর অন্যতম উৎসবের দিন। আজ সেই দিন যেদিন পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিলো বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর। সারা বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমান অত্যন্ত জাঁকজমক, ভক্তি ও মর্যাদার সঙ্গে বছরের এই দিনে ঈদে মিলাদুন্নবী বা নবীর জন্মের ঈদ পালন করেন। এদিনের চেয়ে খুশির দিন সৃষ্টিকুলের জন্য আর কোনোটিই হতে পারে না। মহানবী (সা.)-এর পবিত্র জন্মদিনই গোটা দুনিয়ার সৃষ্টির জন্য এক বিরাট নিয়ামত প্রাপ্তির দিন, মহাখুশির দিন, সর্বোত্তম দিন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর যেই দিন যেই মুহূর্তে পৃথিবীতে আগমন ঘটে সেই দিন ও সেই মুহূর্তটি বিশ্বজগতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দের দিন। এ জন্য বলা হয় ঈদে মিলাদুন্নবী বা নবী (সা.)-এর জন্মোৎসব বা জন্ম দিবসের আনন্দ। তিনি বিশ্বমানবতার প্রতীক ও সত্যসুন্দরের বাণীবাহক।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) শুভাগমনের মাস হিসেবে পবিত্র রবিউল আউয়াল সমুন্নত শান ও মানমর্যাদার মহিমায় সমুজ্জ্বল। নিঃসন্দেহে প্রিয় নবীর আবির্ভাব ও তিরোধানের স্মৃতিবিজড়িত মাস হিসেবে এ মাস বর্তমান মুসলিম মিল্লাতের জন্য ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয়। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বহু বছর ধরে পবিত্র ১২ রবিউল আউয়ালদয়াল নবীজির পবিত্র বেলাদত (শুভাগমন) দিবস উপলক্ষে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে মিলাদুন্নবী(সা.), জশনেজুলুস ইত্যাদি পালন করে আসছে। উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হুজুর (সা.)-এর প্রতি যথাযোগ্য সম্মান, দরুদ ও সালাম পেশ করা অতি উত্তম ইবাদত।

ন্যায়নিষ্ঠা, সততা ও সত্যবাদিতার জন্য হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুয়তপ্রাপ্তির আগেই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ‘আলআমিননামে। ধর্মসম্প্রদায়নির্বিশেষে সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক গুণাবলি হিসেবে এসব সদ্‌গুণ সব কালে, সব দেশেই স্বীকৃত। শুধু তাই নয়, তাঁর মধ্যে সম্মিলন ঘটেছিল করুণা, ক্ষমাশীলতা, বিনয়, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা, শান্তিবাদিতার মতো সব মানবিক গুণাবলির। আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি কর্মময়তাও ছিল তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আরব ভূখণ্ডের পুরো অঞ্চলটি যখন অশিক্ষা, কুসংস্কার, গোষ্ঠীগত হানাহানি, দাসপ্রথা, নারীর প্রতি চরম বৈষম্যসহ নানা রকম সামাজিক অনাচারে নিমজ্জিত ছিল। হজরত মুহাম্মদ (সা.) সেই ঘোর অন্ধকার সময়ে আবির্ভূত হন আলোর দিশারী হয়ে। অন্যায়অবিচারঅজ্ঞানতার আঁধার থেকে মানুষকে তিনি সত্য ও ন্যায়ের আলোকিত পথ দেখান।

সার্বিক অর্থে মানবজাতির মুক্তি ও কল্যাণের জন্যই আবির্ভাব ঘটেছিল এই মহামানবের। তাঁর সত্য ও ন্যায়ের আদর্শ ছিল সর্বমানবিক। আজকের হানাহানি ও সংঘাতময় পৃথিবী শান্তির দিশা পেতে পারে এই মহামানবের প্রদর্শিত শান্তি ও সমঝোতার পথে। তাঁর সুমহান জীবনাদর্শ থেকে মানুষের প্রতি সর্বোত্তম ব্যবহার, বিনয়ী চরিত্র, বিনম্র ব্যক্তিত্ব, আনুগত্যতা, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনসেবা ও মানবকল্যাণ সুনিশ্চিত করাই হোক পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর শিক্ষা। তাই পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করে সেই মহান রবের নিয়ামত প্রিয় নবীকে স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তির পথ ও পাথেয়।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন উৎপীড়িত ও অত্যাচারিত মানুষের প্রকৃত বন্ধু। তিনি অনাথ, দাস, কন্যাশিশু, বিধবা নারী ও গরিবদুঃখীর দুঃখ মোচনে সদা তৎপর ছিলেন। নবুয়তপ্রাপ্তির আগেই তাঁকে আলআমিন (বিশ্বস্ত) ও আসসাদিক (সত্যবাদী) উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল। সরকারে দো আলম সাইয়িদুল মুরসালিন হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন বিশ্ব মানবতার প্রতীক ও সত্যসুন্দরের বাণীবাহক।

মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি দেশের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও আজ যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করবে। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর আনন্দঘন এ দিনে আমরা প্রার্থনা করি, মহানবী (সা.)-এর শান্তি, মিলন ও ভ্রাতৃত্বের জীবনাদর্শই হোক আমাদের জীবনের একমাত্র পাথেয়। আমরা যেন তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ করেই সব ধরনের অন্যায়অবিচার থেকে মুক্তি পেতে পারি। জাতিতেজাতিতে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মিলেমিশে বসবাস করতে পারি। শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, নবীজির সুন্নাত আর তাঁর বাণী হৃদয়ে ধারণ করা এবং তা মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে এই দিবস উদযাপনের প্রকৃত তাৎপর্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে