জননেত্রী শেখ হাসিনা
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আসসালামু আলাইকুম,
মাননীয় নেত্রী আপনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধের সফল নায়ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, আপনি উপমহাদেশের প্রাচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভিভাবক। আপনার অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এই জন্য আপনাকে স্যালুট জানাই। আপনার রাষ্ট্র পরিচালনাকালীন সময়ে দেশে মুক্তিযোদ্ধারা যে সম্মান ও স্বীকৃতি পেয়েছে তা স্মরণযোগ্য।
আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী নাসরিন ফাতেমা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের কূটনৈতিক ফ্রন্টের মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আলী আহমদের কন্যা। বর্তমানে বয়োবৃদ্ধ মাতা মৃত্যু শয্যায়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ সবচেয়ে সম্মানজনক অর্জন স্বাধীনতা লাভ করে। এ স্বাধীনতা লাভের পেছনে সম্মুখ সমরে প্রাণবাজি রেখে যুদ্ধ করা মুক্তিসেনাদের যেমন অবদান ঠিক তেমনই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জনে ভূমিকা রাখা, বিশ্ব জনমত তৈরিতে ভূমিকা রাখা মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকেও অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমি তেমনই এক মুক্তিযোদ্ধার কন্যা। যিনি বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছেন, যিনি পাকিস্তান সরকারের প্রতি বিদ্রোহ ঘোষণা করে, বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে সিঙ্গাপুরস্থ পাকিস্তান দূতাবাস থেকে মুজিবনগর সরকারে যোগদান করেন। মুজিবনগর গেজেট, প্রবাসে বিশ্ব জনমত গেজেটে আমার পিতার বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পরও ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে তিনি স্বীকৃতি পাননি।
আমার পিতা মরহুম আলী আহমদ ১৯৬০ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকুরিতে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি সিঙ্গাপুরস্থ পাকিস্তান হাই কমিশনে সাইফার এসিসট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময়ে তিনি পাকিস্তানি বর্বরতা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
একই সময়ে তিনি বিশ্বের অন্যান্য দূতাবাসের বাঙালি কর্মকর্তাদের সাথেও যোগাযোগ স্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সক্রিয় প্রচেষ্টা চালান। বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার মরহুম আলী আহমদকে ইসলামাবাদে বদলির আদেশ দেন। কিন্তু তিনি সে আদেশ না মেনে বিদ্রোহ ঘোষণা করে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।
তিনি মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সপরিবারে সিঙ্গাপুর থেকে দিল্লী চলে আসেন (আমার বয়স তখন ১০)। সিঙ্গাপুর ছাড়ার আগে সেখানকার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ বিষয়ে বিবৃতি প্রদান করেন। বিষয়টি চিঠি আকারে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা প্রধান ইয়াহিয়া খান, সিঙ্গাপুরে পাকিস্তান দূতাবাসের প্রধান এম আর ইসলাম এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের কাছেও পাঠান। সিঙ্গাপুর থেকে দিল্লী পৌঁছে তিনি বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। বিবিসিতে আলী আহমদের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হলে তা আপামর মুক্তিকামী মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। একাত্তর সালের সেই পেপারকাটিং আমাদের এখনো সংগ্রহে আছে। মুজিবনগর সরকারের গঠনের পর জনাব হোসেন আলীর তত্ত্বাবধানে গড়া বাংলাদেশের প্রথম ডেপুটি হাই কমিশন অফিস কলকাতায় কাজ শুরু করেন। তিনি নভেম্বর ১৯৭১ থেকে জুলাই ১৯৭৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন কোলকাতা অফিসে কূটনৈতিক কর্মচারী হিসেবে চাকুরিতে ছিলেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমার মরহুম পিতা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। প্রমাণের জন্য নিম্নোক্ত দলিলাদি আছে।
১। আনুগত্য প্রকাশের সংবাদের ১৯৭১ সালের পেপারকাটিং।
২। হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্র ৩য় খণ্ড মুজির নগর প্রশাসন গ্রন্থের ৯৮৬ পৃষ্ঠায় মরহুম আলী আহম্মদের আনুগত্য প্রকাশের সংবাদ নথিভুক্ত আছে।
৩। স্বাধীন বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মচারীর পরিবারদের দেওয়া বাংলাদেশের প্রথম পাসপোর্ট এখনো আমাদের সংগ্রহে আছে। আমার নামে ১৯৭২ সালে ইস্যুকৃত পাসপোর্টে ঠিকানা হিসেবে ঈ/ড়- গৎ. অষর. অযসবফ, ইধহমষধফবংয উবঢ়ঁঃু ঈড়সসরংংরড়হ, ঈধষপঁঃঃধ লেখা আছে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো পাসপোর্ট দাবী করতে পারি।
৪। রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীর লেখা ৭১এর দশ মাস গ্রন্থে ৫৩৪ পৃষ্ঠায় আমার পিতার আনুগত্যের বিষয় লেখা আছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমি আমার মুক্তিযোদ্ধা পিতা, যিনি একজন নিবেদিত, সৎ, নিষ্ঠাবান কূটনৈতিক কর্মকর্তা ছিলেন, তাঁর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, যথাযোগ্য মর্যাদা তথা একজন কূটনৈতিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ইতিপূর্বে আমার মা এ স্বীকৃতি আদায়ের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করেছেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য যথাক্রমে ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই ও ২০১৮ সালে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, আজ পর্যন্ত আমরা এর কোনো সদুত্তর পাইনি।
মাননীয় নেত্রী, আমার মা মৃত্যুশয্যায়। আপনি বাংলার দুঃখী-অসহায় মানুষের শেষ ঠিকানা, শেষ আশ্রয়স্থল। আমরা সন্তানেরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে কোনো কোটা চাই না, পরিবার পরিজনের জন্য চাকুরীও চাই না, চাই না কোনো ভাতাও। শুধু চাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মরহুম আলী আহমদের স্বীকৃতিটুকু। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর যে অবদান তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যেন স্বীকৃতি দেয়া হয়। আল্লাহ আপনার সহায় হোন -এ কামনা করছি।
নিবেদক-
নাসরিন ফাতেমা
প্রযত্নে : মোহাম্মদ আলী চৌধুরী
৬৫, কাজেম আলী লেন, ঘাটফরহাদবেগ, চট্টগ্রাম।