মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর কেমন হওয়া চাই? একজন শিক্ষক হিসেবে কাঙ্ক্ষিত মাধ্যমিক পর্যায় নিয়ে আমার ভাবনা তুলে ধরলাম। মাধ্যমিক স্তর হবে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত। এক্ষেত্রে যেসব সরকারি হাইস্কুলে প্রাথমিকের শাখা আছে, সেগুলো অবশ্যই বাদ দিতে হবে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত হবে ৪০ : ১। প্রতিটি শাখায় শিক্ষার্থী থাকবে সর্বোচ্চ ৪০ জন।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে। ভর্তি পরীক্ষা না রাখার প্রয়াস থাকলে ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা তথা পিএসসি পরীক্ষার ভিত্তিতে নম্বরপত্রের মাধ্যমে কলেজে ভর্তির অনুরূপ প্রক্রিয়ায় হাইস্কুলেও ভর্তি করানো যেতে পারে। পাঠ্যপুস্তকসমূহ রচিত হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে। এছাড়াও বইয়ের ছাপার মানও হতে হবে আকর্ষণীয় এবং টেকসই। উদাহরণ হিসেবে ক্যামব্রিজ কারিকুলামের বইসমূহকে বিবেচনা করা যেতে পারে। এছাড়াও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ের বিষয়বস্তুতেও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে যেনো পরবর্তী শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থী বিভ্রান্ত না হয়। ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনে পাঠ্যবইসমূহ পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্কুলসমূহে মানসম্মত বিজ্ঞানাগার, আইসিটি ল্যাব, ডিবেট ক্লাব, সায়েন্স ক্লাব ইত্যাদি বাধ্যতামূলক করতে হবে। এসব বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে।
মূল্যায়ন হবে সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে লিখিত ও ব্যবহারিক অংশের সমন্বয় হতে পারে। বিষয়ভেদে নম্বরের তারতম্য হতে পারে। ৭০% লিখিত, ৩০% ব্যবহারিক অংশ হতে পারে। লিখিত অংশে বহুনির্বাচনী অভীক্ষা বাদ দিয়ে পুরোটাই লিখিত হওয়া জরুরি। প্রয়োজনে বহুনির্বাচনী অভীক্ষার স্থলে এক কথায় উত্তর থাকতে পারে।
পুরো কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য লাগবে যোগ্যতাসম্পন্ন ও দক্ষ শিক্ষক। সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের কাছ থেকে ফলপ্রসূ শিক্ষা কার্যক্রম পেতে হলে যা জরুরি: শিক্ষকদের জন্য একটি সুস্পষ্ট, যৌক্তিক ও কাঙ্ক্ষিত পদসোপান তৈরি করতে হবে। তাদের পদোন্নতি হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে; শুধু অভিজ্ঞতা নয় বরঞ্চ বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে।
সকল স্তরের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র ও যুগোপযোগী বেতন স্কেল প্রণয়ন করতে হবে যা মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্যও প্রযোজ্য হবে। অতিরিক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বিএড, এমএড, এমফিল, পিএইচডি ইত্যাদি প্রোগ্রামে ভর্তি সুযোগ প্রসারিত করতে হবে। অতিরিক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য আর্থিক প্রণোদনা তথা ইনক্রিমেন্ট থাকা যৌক্তিক। শিক্ষকদের জন্য দেশে ও বিদেশে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে পূর্ণ পেশাদারিত্ব রক্ষা করতে হবে।
বেসরকারি স্তরের শিক্ষকদের জন্যও মূল বেতনের পাশাপাশি বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি সমহারে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে নন–এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান হলে স্কুল পরিচালনা কমিটি যেনো এসব প্রাপ্যতা নিশ্চিত করেন, সেটি বাধ্য করতে হবে। শিক্ষকরাও যাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেন, সে লক্ষ্যে শিক্ষার্থী কর্তৃক ‘শিক্ষক মূল্যায়ন ব্যবস্থা’ যুক্ত করতে হবে। কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের নিমিত্তে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি উপর্যুক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিলে একটি কাঙ্ক্ষিত ও বৈশ্বিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর তৈরি সম্ভব।