মাদ্রাসার স্টোররুমে ছাত্রের গলাকাটা লাশ

বোয়ালখালী ঘটনা ।। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন শিক্ষক আটক

বোয়ালখালী প্রতিনিধি | রবিবার , ৬ মার্চ, ২০২২ at ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বোয়ালখালী থেকে ইফতেখার মালিকুল মাশফিক (৭) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রের গলাকাটা লাশ উদ্ধার হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে উপজেলার চরণদ্বীপ আল্লামা শেখ অছিয়র রহমান ফারূকী (রহ.) এতিমখানা ও হেফজখানার স্টোররুম থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এতে জড়িত সন্দেহে ওই মাদ্রাসার ৩ শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ। মাশফিক একই ইউনিয়নের ফকিরাখালী বকসু মিয়া সওদাগর বাড়ির প্রবাসী আবদুল মালেকের ছোট সন্তান। তার বড় আরো দুই ভাই রয়েছে । সে ওই হেফজখানার নাজেরার ছাত্র ছিল।
জানা যায়, বছরখানেক আগে মাশফিককে কোরআন শিক্ষার জন্য ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়। কয়দিন আগে ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল সে। গত শুক্রবার বিকালে ছুটি শেষে তাকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসে পরিবারের লোকজন। শনিবার সকালে মাদ্রাসা থেকে হঠাৎ তার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়, মাশফিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ খবর পাওয়ার সাথে সাথেই পরিবারের লোকজন মাদ্রাসায় গিয়ে খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে দোতলার স্টোররুমে কম্বলে মোড়ানো তার গলাকাটা লাশটি পাওয়া যায়।
বিডিনিউজের খবর থেকে জানা যায়, সাইদুল ইসলাম শামীম ও আহমদ উল্লাহ মুন্না নামে হেফজ শাখার দুই ছাত্র জানান, দুই তলা বিশিষ্ট হেফজ খানার নিচ তলায় তারা কায়দা, আমপারা ও হেফজ শাখার প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকে। তাদের সাথে থাকেন হাফেজ জাফর আহমেদ ও হাফেজ মো. রুস্তম আলী নামে দুই শিক্ষক। হেফজখানার নিচ তলায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও থাকার রুম। আর দ্বিতীয় তলায় তাদের মালামাল রাখা হয়।
দুই শিক্ষার্থী আরও জানান, প্রতিদিনের মতো শনিবারও ভোরে নামাজ পড়ে তারা ক্লাস শুরু করেন। এ সময় ক্লাসে পাঠদান করছিলেন হাফেজ জাফর আহমেদ, রুস্তম আলী ছিলেন বাইরে। তারা বলেন, সকাল ৭টার দিকে বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে মাশফিক জাফর আহমেদের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে ক্লাসের বাইরে যান। পরে তাকে খোঁজাখুঁজি করে কোনো স্থানে না পেয়ে দ্বিতীয় তলায় রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
নিহত শিশুর বড় ভাই ইমতিয়াজ মালেকুল সাজেদ জানান, সকাল পৌনে ৮টার দিকে মাদ্রাসা থেকে তাকে ফোন করে মাশফিককে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানানো হয়। তিনি বলেন, এ সময় আমি মাদ্রাসার কাছে আমার দুই বন্ধুকে ফোন করে ভাইয়ের খোঁজ নিতে বলি। তারা এসে দ্বিতীয় তলায় কম্বল ও বিভিন্ন ধরনের কাপড় চাপা দেয়া অবস্থায় মাশফিকের গলাকাটা লাশ দেখতে পায়।
মাশফিককে খুঁজতে আসা তার বড় ভাইয়ের দুই বন্ধু হাবিবুল হাসান ও জুনায়েদ আলম সায়েম জানান, সকালে মাশফিকের বড় ভাই মাজেদের ফোন পেয়ে মাদ্রাসায় আসেন এবং প্রথমে মাদ্রাসার আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে খোঁজেন, না পেয়ে মাদ্রাসায় ঢোকেন। এ সময় তারা গিয়ে হেফজখানার সিঁড়ির কাছে এক শিক্ষককে দেখতে পেয়ে মাশফিকের খোঁজ করেন। তিনি তাদের আজান দেওয়ার পরামর্শ দেন।
সায়েম বলেন, এ সময় আমরা দুই বন্ধু এবং মাশফিকের মামাও খুঁজতে আসে তাকে। হেফজখানার শিক্ষার্থীরাও তার খোঁজ নিতে থাকেন। আজান দেয়ার পর দ্বিতীয় তলায় খুঁজতে থাকা দুই শিক্ষার্থী কম্বলসহ চাপা দিয়ে রাখা অবস্থায় মাশফিকের পা দেখে চিৎকার শুরু করে। তখন আমরা গিয়ে কম্বল তুলে মাশফির লাশ দেখতে পাই। তিনি জানান, মাশফিকের মুখ কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে রাখা ছিল। তার উপর আরও কিছু কম্বল ব্যানারসহ বিভিন্ন কাপড় দিয়ে রাখা হয়।
ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্দ এলাকাবাসী মাদ্রাসা ঘেরাও করে ফেলে। খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। মাইকে এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
ঘটনাস্থলে থাকা পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহভাজন মো. রুস্তম আলী, মো. শাহাদৎ হোসেন ও মো. জাফর আহম্মেদ নামের মাদ্রাসার তিন শিক্ষককে থানায় নেওয়া হয়েছে। আশা রাখি অতি সহজেই আসল অপরদিকে আটক করতে সক্ষম হবো।
মাদ্রাসার পরিচালক শাহজাদা শেখ মো. সালাউল্লাহ বলেন, সকালে মাশফিক সবার সঙ্গে জামাতে নামাজ পড়েছে। এরপর ছবকও নিয়েছে সে। ৭ টার দিকে নাস্তা করতে গেলে তাকে আর পাওয়া যায়নি। সবাই মিলে খুঁজতে খুঁজতে এক পর্যায়ে হেফজখানার দোতলায় তার গলাকাটা লাশ দেখতে পাওয়া যায়।
বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবদুল করিম বলেন, আটক ৩ শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পোস্ট মর্ডেমের পর নিহতের লাশের দাফন কার্য সম্পন্ন হয়েছে। অপরাধীদের আটকে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময় পর্যন্ত এ নিয়ে কোন মামলা হয়নি তবে কেউ মামলা করতে চাইলে মামলা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসির ডেটা এন্ট্রি অপারেটর গ্রেপ্তার, দুই দিনের রিমাণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধজাতিসংঘে ভোট না দেওয়ার ব্যাখ্যা দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী