বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ, ‘কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস। দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী কিশোর–তরুণ। ইউএনডিপি এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ মানুষের বয়স চব্বিশ বা এর নিচে। অর্থাৎ, দেশের জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর একটি অংশ শিশু, তরুণ, এবং কিশোর। এই তরুণ, কিশোর আগামীতে এই দেশকে নেতৃত্ব দিবে। উন্নত, সুৃখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় রূপ দিতে তৎপর হবে। এই প্রত্যাশা আমাদের সবার। পরিসংখ্যান, গবেষণাপত্র কিংবা সমীক্ষায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে, শঙ্কিত হতে হয়। দেশে বর্তমানে দেড় কোটি মানুষ মাদকের সাথে প্রত্যক্ষ–পরোক্ষভাবে জড়িত। তন্মধ্যে নিয়মিত মাদকসেবনকারীর সংখ্যা প্রায় এক কোটির মতো। এই এক কোটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই তরুণ–কিশোর (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর)। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধুমপান মাদক নামক ‘নীরব ঘাতকের‘ প্রবেশ পথ। পরবর্তীকালে গাজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, কোকেনসহ দেশি–বিদেশি নাম জানা অজানা নিত্য নতুন মাদকে আসক্ত হয়। নীতি, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের এই সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণির কোমলমতি শিক্ষার্থীর দোরগোড়ায় মাদক হানা দিচ্ছে। কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে মাদক আশঙ্কাজনকভাবে বিস্তার লাভ করছে। যার দরুণ এই মাদক আমাদের নবীন, কিশোর, তরুণ প্রজন্মের প্রাণশক্তি ও মেধাকে শুধুই ধ্বংস করছে না, পাশাপাশি এর ফলে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অপরাধ ও অপকর্ম ছড়িয়ে পড়ছে।
বলা বাহুল্য, বেশিরভাগ মাদকই ব্যয়বহুল। এই মাদকের টাকা যোগাড় করতে ব্যর্থ হলে মাদক সেবনকারীর হিংস্রতা জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্বভাবতই, শিশু–কিশোররা অনুকরণপ্রিয়। তারা বন্ধু–বান্ধব কর্তৃক বেশি প্রভাবিত হয়। সন্তানদের বন্ধু নির্বাচনে পিতা–মাতার তদারকি, নৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ করা সর্বোপরি মাদক নামক নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা পিতা–মাতার অন্যতম কর্তব্য।
মাদকের বিরুদ্ধে সরকার যে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে সেটা প্রশাংসাযোগ্য। তবে এক্ষেত্রে ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ কিংবা কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ পরিহার করে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আরোপ করায় অধিকতর যুক্তিসঙ্গত। আগামীর বাংলাদেশ হোক মাদকমুক্ত। ‘এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব’ এই হোক আমার–আপনার অঙ্গীকার।