পৃথিবীতে বেশিরভাগ পরিবারে শেষ বয়সে অবহেলিত হন বাবা-মা। কিন্তু কেন এই অবহেলা? অতি স্নেহে আদরে যাদেরকে বড়ো করে তোলেন তারাই কেন তাদের দুঃসময়ে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়? বিভিন্ন উৎসবে যেমন ঈদের দিনেও যখন তারা তাদের সন্তানদের কাছে পান না, তখন অনেকেই নীরবে অশ্রুপাত করেন আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।
সন্তানের টাকা-পয়সার অভাব নেই, কিন্তু বাবা-মাকে নিজের কাছে রাখার প্রয়োজনবোধ করে না, বা বোঝা মনে করছেন। হয় নিজেই পাঠিয়ে দিচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে, নয়তো অবহেলা-দুর্ব্যবহার করে এমন অবস্থার সৃষ্টি করছে, যেন তাঁরা নিজেরাই সরে যান তাঁদের সাধের পরিবার থেকে। তবে এমন সন্তানের সংখ্যা অসংখ্য নয়। একবার বৃদ্ধনিবাসে পাঠাতে পারলেই যেন সব দায়মুক্তি। অনেক নামি-দামি শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, চাকরিজীবী যারা একসময় খুব বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন, বৃদ্ধ বয়সে এসে নিজের সন্তানের দ্বারাই অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে। আজ যে সন্তান তার বাবা-মাকে জোর করে কিংবা এমনভাবে অবহেলা করছে যাতে, তাঁরাই যেন বৃদ্ধাশ্রমে যেতে বাধ্য হন, সেই সন্তানকেই যখন তার সন্তান এভাবেই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবে, তখন তার কেমন লাগবে? সময় বড়ো বেরসিক। আবর্তিত হয়ে বদলা নেবেই! মা-বাবা সর্বোত্তম-তাঁদের দোয়া ছাড়া পার হতে পারবে না পরপারের বাধা। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের স্বর্গ রাখা। আমাদের মনে রাখা উচিত-আজ যিনি সন্তান, তিনিই আগামী দিনের বাবা কিংবা মা। বৃদ্ধ বয়সে এসে মা-বাবারা যেহেতু শিশুদের মতো কোমলমতি হয়ে যান, তাই তাদের জন্য সুন্দর জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরি করাই সন্তানের কর্তব্য। আর যেন কখনো কোনো বাবা-মায়ের ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
মোহাম্মদ জীবন আহমেদ, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, সিলেট।