মাতব্বর ঘাটে যাত্রীভাড়া ২০ টাকা! চসিকের সিদ্ধান্তে যাত্রীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

কর্ণফুলী প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ at ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর জুলধা ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাটে যাত্রী পারাপারে চলতি বছর জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) রাজস্ব বিভাগের এস্টেট শাখা। বিগত বছর এই ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। অর্থাৎ এবার ভাড়ায় ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ সিদ্ধান্তে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে—কেউ কেউ বাড়তি ভাড়ায় অসন্তুষ্ট হলেও, অনেকেই ঘাটে উন্নত পরিবেশ ও সেবা নিশ্চিতের শর্তে ২০ টাকা ভাড়াকে যৌক্তিক বলছেন।

নতুন এই ভাড়া কার্যকর হয়েছে গত সোমবার, পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) থেকে। তবে কর্ণফুলী উপজেলার হাজার হাজার যাত্রীর দাবি, ভাড়া বৃদ্ধি না করে পূর্বের হার ১৫ টাকা রাখা উচিত।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে পুনর্বিবেচনার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। তবে চসিকের সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দিচ্ছেন ইজারাদার ও সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও অন্যান্য ব্যয় বিবেচনায় বর্তমান ভাড়া যৌক্তিক।

সরেজমিনে ঘাট এলাকায় কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ যাত্রীই বাড়তি ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

গার্মেন্টকর্মী মিনু আক্তার বলেন, ‘আমি প্রতিদিন দুইবার এ ঘাট পার হই। আগে ১৫ টাকা ছিল, এখন ২০ টাকা দিতে হচ্ছে। মাস শেষে যে বেতনে চলি, তাতে ৫ টাকা করে বাড়তি খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়ে।’

দিনমজুর মো. ইয়াছিন জানান, ‘আমার দিনে তিনবার পারাপার লাগে। ভাড়া যদি এভাবে বাড়তেই থাকে, সংসার চালানো মুশকিল হবে। চসিকের উচিত বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া।’

অফিসগামী যাত্রী একরাম বলেন, ‘যানবাহনের ভাড়া বাড়ছে, এখন ঘাটেও বাড়তি খরচ। অথচ চাকরিজীবীদের আয় বাড়েনি। পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি, কিছু বলার জায়গাও নেই।’

কর্ণফুলী উপজেলার বাসিন্দা নুরুল আবছার বলেন, ‘অভিয়মিত্র বা সদরঘাট ব্রিজঘাট থেকে কর্ণফুলী ঘাট মাত্র ৪-৫ মিনিটের পথ। তুলনায় মাতব্বর ঘাট থেকে পতেঙ্গা দূরত্ব অনেক বেশি, নদীটিও প্রশস্ত। ফলে খরচও বেশি—২০ টাকা এখানে যৌক্তিক, তবে ঘাটে যাত্রী ছাউনি, পাবলিক টয়লেট ও বর্ষায় লাইফ জ্যাকেট নিশ্চিত করা দরকার।’

জুলধা লাইফবোট ও সাম্পান মাঝি মালিক সমবায় সমিতির সদস্য সালেহ আহমেদ ওরফে লালু সওদাগর বলেন, ‘আগে ঘাটে খাস কালেকশন হতো, এবার ইজারা হয়েছে। চসিকের নির্দেশনা অনুযায়ীই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। ইজারাদারের এখতিয়ার নেই তা পরিবর্তনের।’

ইজারাদার প্রতিনিধি মো. ফারুক বলেন, ‘জ্বালানি, যন্ত্রাংশ ও শ্রমিক খরচ বেড়েছে। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী ৫ টাকা বাড়িয়ে ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে যাত্রীরা চাইলে আমরা চসিককে স্মারকলিপি দিয়ে ভাড়া পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাবো।’

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এ ঘাটে ‘খাস কালেকশন’ পদ্ধতি থাকলেও এবার ঘাটটি ভ্যাটসহ প্রায় ২ কোটি ২ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ঘাটের অপর ইজারাদার নেজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, এই ইজারা ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার মূল্যে কার্যকর হয়েছে পহেলা বৈশাখ থেকে।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা জান্নাতকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় সরকারি প্রশিক্ষণে রয়েছেন বলে জানান।

অন্যদিকে, চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামাল বলেন, ‘স্থানীয়দের অভিযোগ থাকলে সেটি লিখিতভাবে জানালে সিটি করপোরেশন বিষয়টি বিবেচনায় নেবে। ইজারা শর্ত অনুযায়ী ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে জনগণের দাবির ভিত্তিতে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজন হলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধআদালতের রায়ে বন্ধ হল বান্দরবানের মেঘলা ‘মিনি চিড়িয়াখানা’
পরবর্তী নিবন্ধএকনেকে উঠছে চট্টগ্রাম ওয়াসার দুটি প্রকল্প