মাঠ ভর্তি সোনালি ধান, কাটার জন্য নেই পর্যাপ্ত শ্রমিক

রাঙ্গুনিয়ায় সংকটে অধিকাংশ কৃষক

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৩ মে, ২০২২ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। তবে দেখা দিয়েছে তীব্র শ্রমিক সংকট। দ্বিগুণ মজুরিতেও মিলছে না শ্রমিক। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। তবে কাটার মৌসুমে এসে এখন শুরু হয়েছে বাতাস ও বৃষ্টি। এতে কষ্টের ফসল বাঁচাতে দ্রুত ধান কেটে বাড়ি তোলার জন্য কৃষকরা তাড়াহুড়া করছেন। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে হালকা বৃষ্টি ও বাতাসেও ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এমনকি কাটা ধানও শ্রমিক সংকটে ঘরে আনার আগেই মাঠেই ভিজে যাচ্ছে। এখনো মাঠে ৭০ শতাংশ ধান থেকে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্রে জানা যায়, এই মৌসুমে রাঙ্গুনিয়ায় ৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রিড ১৬১০ হেক্টর এবং উফশী ৬৭৫৫ হেক্টর। ইতিমধ্যে সব জাতের ধান পেকে গেছে। অর্ধেকেরও বেশি কৃষকদের জমির ধান কাটা-মাড়াই হয়েছে। হাইব্রিড জাতভেদে হেক্টর প্রতি ৭-৯ মে. টন এবং উফশী ৫.৮ – ৭.৫ মে. টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। সরেজমিনে চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার গুমাইবিলে গিয়ে দেখা যায়, বিলের সব ধান পেকে সোনালি বর্ণ ধারণ করেছে। ধানগুলো কৃষকের উঠোনে যাবার অপেক্ষায়। কিন্তু শ্রমিক সংকটে কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। কেউ কেউ অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে শ্রমিকদের কাজে এনেছেন। এছাড়া হারভেস্টার মেশিন দিয়েও ধান কাটতে দেখা গেছে গুমাইবিলে। কথা হয় গুমাইবিলের কৃষক মো. রেজাউল করিমের সাথে। তিনি বলেন, এবার ১১ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। খুব কষ্ট করে শ্রমিক সংগ্রহ করলেও বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকার কমে ধান কাটতে রাজি হয় না। তাই বাধ্য হয়ে ধান কাটতে লাগিয়ে দিয়েছি।

আক্কাস মিয়া নামে অপর একজন কৃষক জানান, এক কানি (৪০ শতক) জমিতে ধান কাটতে একদিনে ৩ জন শ্রমিক, নেয়ার জন্য আরও ২ জন, শুকানো এবং ঝাড়ানোর জন্য ২ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। প্রতিজন শ্রমিককে ১৩০০ টাকা মজুরি দেয়ার পরও খাওয়ানো বাবদ আরও ২০০ টাকা করে খরচ আছে। এছাড়া মাড়াই করতে আরও ১০০০ টাকা প্রয়োজন। সবমিলিয়ে এক কানি ধান গোলাই তুলতে গেলে সাড়ে ১১ হাজার টাকা খরচ পড়ছে।

পোমরা এলাকার কৃষক আবদুর রহিম বলেন, গত বছর জনপ্রতি শ্রমিকের মূল্য ছিল সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা। কিন্তু এ বছর তা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। যার কারণে আমরা শ্রমিক নিতে পারছি না। অতিরিক্ত মূল্যে শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে গেলে ধান বিক্রি করে দিন শেষে লোকসান গুনতে হবে।

বাঁশখালী থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিক মো. করিম বলেন, আমরা প্রতিদিন ১২-১৪ জন মিলে ২-৩ বিঘা জমির ধান কাটতে পারি। ধানগাছ যদি দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে ৬ হাজার টাকা বিঘা আর যদি বাতাসে ধানের গাছ মাটিতে পড়ে যায় তাহলে ৭ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা করে নিচ্ছি।

শ্রমিক সংকটের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে গুমাইবিলে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, প্রতি মৌসুমে উত্তর বঙ্গ থেকে প্রচুর ধান কাটা শ্রমিক আসেন। কিন্তু বোরো মৌসুমে উত্তর বঙ্গে প্রচুর ধানের আবাদ হয়। ফলে সেখানকার শ্রমিকরা এদিকে আর আসেন না। যার ফলে বাজারে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, এবার গুমাইবিলে কম্বাইন্ড হারভেষ্টার দ্বারা ধান কর্তন করা হচ্ছে। এটির সাহায্যে একেবারে ধান কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই এবং বস্তাবন্দীও করা হচ্ছে। যেখানে কানি প্রতি (৪০ শতক) খরচ নেওয়া হচ্ছে মাত্র ২৫০০-৩০০০ টাকা করে। সময় লাগছে মাত্র ৪০-৪৫ মিনিট। যেখানে শ্রমিক দিয়ে একাজ করতে বর্তমানে ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে সারাদিন লেগে যেতো।

মরিয়ম নগরের কৃষক নুর উদ্দীন জানান, ৭ হেক্টর জমিতে বোরোধান চাষ করেছি, ফলনও বেশ ভাল হয়েছে। শ্রমিক সংকটে কিছুটা বিপাকে পড়লেও হারভেষ্টার মেশিনের সাহায্যে ধান কাটতে পেরেছি।

রাণীরহাট এলাকার রাইচমিল মালিক মো. আবু তৈয়ব জানান, গেল মৌসুমের তুলনায় এবছর ধানের দাম কিছুটা বাড়তি। বাজারে বর্তমানে চিকন ধান কেজি প্রতি জাতভেদে ২৩-২৫ টাকা এবং মোটা ধান কেজি প্রতি ২০-২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গেল মৌসুমে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জানান, হারভেস্টার এবং অন্যান্য ধান কাটার মেশিন দিয়ে ধান কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছুটা শ্রমিক সংকট থাকলেও আমরা কৃষকদের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে বলছি। এতে খরচ কমবে কৃষকদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকেজিডিসিএলের ঠিকাদার টেকনেশিয়ানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা