মাঝারি ভূমিকম্পে কাঁপল চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা

চৌদ্দগ্রামে আহত শতাধিক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন হলে ফাটল ভূমিকম্পের পূর্ব প্রস্তুতিতে জোর দেওয়ার আহ্বান

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গতকাল সকালে মাঝারি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে এই ভূমিকম্পে চট্টগ্রাম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল কেঁপে ওঠে। ভূমিকম্পের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৬ ছিল জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বলছে, ঢাকা থেকে ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ছিল এর উৎপত্তিস্থল। এটির গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।

ভূমিকম্পে কাঁপুনি টের পাওয়ার পর বিভিন্ন ভবন থেকে লোকজন রাস্তায় নেমে আসে। হুড়োহুড়িতে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে কিছু ঘটনা ঘটলেও চট্টগ্রামে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

চৌদ্দগ্রামে হুড়োহুড়িতে আহত শতাধিক : বিডিনিউজ জানায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে ভবন থেকে নিচে নামতে গিয়ে শতাধিক পোশাক শ্রমিক আহত হয়েছেন। অন্তত ২০ জন গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। গতকাল ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ছুপুয়া এলাকায় অবস্থিত আমির শার্ট গার্মেন্টে এই আহতের ঘটনা ঘটে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন হলে ফাটল : ভূমিকম্পের পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হলের দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হলের শিক্ষার্থীরা। ভূকম্পনের পরপরই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের দুটি ও মেয়েদের একটি হলের দেওয়ালে ফাটল দেখতে পান শিক্ষার্থীরা। হলগুলো হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল।

বিবিসি বাংলা জানায়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, এর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিসও নিশ্চিত করেছে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকেই এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে নিয়মিত বিরতিতে ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে আসছে। সাধারণত সিলেট ও এর আশপাশের অঞ্চলকে বাংলাদেশে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে দেখা হয়। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা ও এর আশপাশেও ভূমিকম্পের উৎপত্তি হতে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বারবারই সতর্ক করে আসছেন সামনে একটা বড় ভূমিকম্পের ব্যাপারে। এ সময় লক্ষ্মীপুর থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তি কি নতুন কোনো শঙ্কার কারণ?

তেমনটি অবশ্য মনে করেন না ভূতত্ববিদ হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছরে আমরা যে হালকা থেকে মাঝারি ভূমিকম্প দেখছি, এটাও সে রকম একটা হয়ে গেল। তিনি বলেন, ৭ মাস আগে নারায়ণগঞ্জে হালকা ভূমিকম্প হলো। গত বছর সিলেটে। এসবই কিন্তু সাবডাকশন জোনে পড়েছে। এটা ভিন্ন কিছু নয়। তবে অবশ্যই শঙ্কার কারণ। সাবডাকশন জোনে ছোট ভূমিকম্প আসলে বড় ভূমিকম্প হওয়ার পূর্ব লক্ষণ।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের পূর্ব প্রস্তুতিতে জোর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা কাঠামো, তাতে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি যে রকম থাকা উচিত সরকার সেভাবে নিচ্ছে না। সরকার ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারের জন্য খরচ করছে। কিন্তু আগে থেকে জনগণকে সচেতন করা গেলে, এই দুর্বল অবকাঠামোর মধ্যে নিরাপদ অঞ্চল চিহ্নিত করা গেলে, সামনে যদি বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে তাহলে আমরা অনেক জীবন নিরাপদ রাখতে পারব।

ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে যেসব ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে। অনেকগুলো ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের মিজোরাম বা ত্রিপুরা রাজ্যে। তবে ঢাকার আশেপাশে উৎপত্তিস্থল রয়েছে, এমন ভূমিকম্পও মাঝেমধ্যে হতে দেখা গেছে।

ভূতত্ববিদ হুমায়ুন আখতার বলেন, ২০০৮ থেকে ২০১২১৩ পর্যন্ত ঢাকার কাছাকাছি নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা অঞ্চলে গ্রীষ্মের সময় অনেকগুলো ছোট ছোট ভূমিকম্প হতে দেখেছি আমরা।

ঢাকার কাছে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলেও গত বিশ বছরের মধ্যে একাধিক ছোট ছোট ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে। পাশাপাশি গত ১৫ বছরে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে অন্তত চারবার ভূমিকম্প হয়েছে বলে জানিয়েছে ভূমিকম্প শনাক্তকারী সংস্থা আর্থকোয়েকট্র্যাক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচার স্ক্যানার স্থাপনের স্থান চূড়ান্ত করলেন এনবিআর চেয়ারম্যান
পরবর্তী নিবন্ধকিউইদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম জয়