বাড়িতে কেউ নেই। আমি একাই আছি। বাড়ির সবাই আত্মীয় বাড়িতে দাওয়াত খেতে গেছে। আজ আর ফিরবে না। আমি ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছি। নিরিবিলি নিশ্চুপ একটা রুম। বারান্দার রুম। এই রুমে একটা বইয়ের সেল্ফ আছে। আর আছে একটা টেবিল আর চেয়ার। টেবিলের পর কিছু। বইয়ের সেল্ফটা অনেকটা জানালা ঘেঁষাঘেঁষি। বিঘত খানিকবা বিঘত দেড়েক ফাঁকা। ঐ জায়গা টুকুতে খুব একটা আলো পড়েনা। অনেকটা এমন যে ঘরের মধ্যে ভূতুড়ে জায়গা। আমি ল্যাপটপ নাড়াচাড়া করছি। নাড়াচাড়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ এখন ও কম্পিউটারের কাজ ভালো করে পারিনা। নতুন কিনেছি। অনেক পিড়াপিড়িতে আব্বু কিনে দিয়েছে। আব্বুকে অবশ্য মিথ্যা কথা বলতে হয়েছে যে আমি ল্যাপটপের টাইপিং গুলো করতে পারি। আমি ভালো করে টাইপিং করতে পারি জেনেই আব্বু অনেকটা খুশি হয়েই কিনে দিয়েছেন। আসলে আমি কিচ্ছুই পারি না। সবে মাত্র শুরু করেছি। আর আত্মীয় বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাওয়া হয়নি এই ল্যাপটপ চালানোর নেশাতেই। বুক সেল্ফের মাথার দিকে একটা মাঝারি সাইজের বাদামী রঙের মাকড়সা পড়লো।
হাঁটাহাঁটি করছে। মনে হলো কোন চিন্তাবভাবনা করছে। বা কোনো ফন্দি আঁটছে। আমি আবার ল্যাপটপে মনোযোগ দিলাম। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের কাজ শেখার জন্যই কিবোর্ড নিয়ে দাপাদাপি করছি। যাতে অন্তত টাইপিংটা দ্রুত শিখতে পারি। হাত চালু করা, কি গুলো চেনা, কি টাইপিং এ গতি বাড়ানো, এই সব করছি একা–একা। আমার বিশ্বাস আমি যতো চর্চা করবো আমি তত তাড়াতাড়ি কম্পিউটার হৃদয়ে ধারণ করতে পারবো। কলাকৌশল আয়ত্তে আনতে পারবো। সেই জন্য দিনরাত ট্রাই করছি। যাতে আব্বুকে দেখাতে পারি যে আমি টাইপিং পারি। হঠাৎ মাকড়সার দিকে নজর গেলো। মাকড়সা দেখি জাল বানাচ্ছে। জানালার গ্রিলের সাথে আর বুক সেল্ফের কোণা থেকে শুরু করেছে। খুব দ্রুতই কাজ চলছে। আমি এবার ল্যাপটপ শাট ডাউন করে দিলাম। চেয়ারে হেলান দিয়ে মাকড়সার কাজ দেখতে লাগলাম। কি চমৎকার করে জাল বুনিয়ে চলছে। পা দিয়ে মুখ দিয়ে। মানুষ ও এত সুন্দর জাল তৈরি করতে পারবে না। মনে হচ্ছে জালের ফাঁস গুলো সবই সমান। মেশিনে তৈরি করলে এই ফাঁস গুলোর মাপ এত নিখুঁত হবে না। যাহোক জাল টানানো হয়ে গেল একবার। ভাবলাম মাকড়সা বিশ্রাম নিচ্ছে।নেটের এক পাশে চুপটি মেরে বসে রইল। অনেক ক্ষণ সময় এভাবেই কেটে গেলো। একবার একটি ছোট্ট পোকা নেটে আঁটকে গেল। পোকাটি নেট থেকে ছোটার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো। যতই নড়াচড়া করলো ততই নেটের আঠার সাথে জড়িয়ে যেতে লাগলো । পোকাটি একবার নিজের বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে নীরব হয়ে গেলো। এরপর মাকড়সাটি ধীরে ধীরে সেই পোকাটির ওখানে গেলো এবং পোকাটিকে খেয়ে ফেলল। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। কি আশ্চর্য রকম বুদ্ধি! খাদ্য স্বীকার করার। মানুষকেও হার মানাবে। এভাবে বেশ কয়েকটা পোকামাকড় খেয়ে নিল মাকড়সাটি। অবাক করার বিষয় যেখানে মাকড়সাটি খেয়ে দেয়ে নেটের এক প্রান্তে চুপচাপ বসে থাকে তারই পাশে মোটামুটি বড় আকারের একটা টিকটিকি ঘুরাঘুরি করতে ছিল।
একবার মাকড়সাটির কাছে গেল। চোখের পলকে তার জিভটি ছুঁড়ে দিয়ে মাকড়সাটি ধরে ফেললো এবং এক নিমিষেই তার মুখের মধ্যে নিয়ে টকাটক গিলে ফেললো।