নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন শমসেরপাড়া এলাকায় দিনেদুপুরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে আফতাব উদ্দিন তাহসিন (২৭) নামে এক যুবককে হত্যা করেছে। গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে নগরের চান্দগাঁও থানার উদুপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে চান্দগাঁও থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত তাহসিনের লাশ উদ্ধার করে চমেক হাসাপাতলে নিয়ে যায়।
নিহত তাহসিনের ছোট ভাই মো. তানভীর জানান, গত ২৯ আগস্ট নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন–কুয়াইশ সড়কে চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনায় আসামি প্রকাশ্যে ঘুরছে। এ নিয়ে নিজের ফেসবুকে গতকাল একটি স্ট্যাটাস দেন তাহসিন। তিনি লিখেন, ‘প্রশাসন চুপ কেন? ডাবল মার্ডার হওয়ার ২ মাস হয়ে গেছে। এখনো একজন আসামিও গ্রেপ্তার হয় নাই।’ নিজের ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দেওয়ার ৩ ঘণ্টার মধ্যে তাকে (তাহসিনকে) প্রকাশ্যে খুন হতে হলো।
পুলিশ জানায়, নিহত তাহসিন চান্দগাঁও থানার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীরপুল এলাকার দিলা মিস্ত্রি বাড়ির মোহাম্মদ মুসার ছেলে।
চান্দগাঁও থানার ওসি তদন্ত ছাবেদ আলী আজাদীকে বলেন, ওই যুবক প্রতিদিন বিকালে উদুপাড়ার ওই এলাকায় চা খেতে আসত। গতকালও একই সময়ে চা খেতে এসেছিল। এ সময় মাইক্রোবাসে করে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ও তার সহযোগীরা এসে অতর্কিতভাবে তাহসিনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। মাইক্রোটা এসে যেখানে দাঁড়িয়েছিল তাহসীন তার কাছেই ছিল। প্রথমে গাড়ির ভেতর থেকে গুলি করা হয়েছে। তারপর মাইক্রো থেকে বের হয়ে সন্ত্রাসীরা গুলি করে চলে যায়। সাজ্জাদের সাথে তার কয়েকজন সহযোগীও ছিল। সাজ্জাদসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. আবদুল্লাহ ও রফিকুল ইসলাম বলেন, নিহত তাহসিন এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে ইট ও বালুর ব্যবসা করতেন। শমসেরপাড়ার উদুপাড়া এলাকায় তার ব্যবসার জন্য আনা বালু ও ইট রাখা হয়। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে মজুতের জন্য এক ট্রাক বালু আনা হয়। এ কারণে তাহসিন সেখানে আসেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে একটি নোহা মাইক্রোবাস আসে। প্রথমে গাড়ির ভেতর থেকে তাহসিনকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোড়া হয়। এরপর সাজ্জাদ ও তার সহযোগী মাহমুদ, হাছানসহ চারজন গাড়ি থেকে নেমে গুলি করতে থাকে। তারা তাহসিনের ঊরু ও পায়ে পরপর চারটি গুলি করে চলে যায়। এ সময় আশপাশে লোকজন থাকলেও সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র থাকায় ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।
নিহত তাহসিনের বন্ধুরা জানান, তাহসিন নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে ইট ও বালুর ব্যবসা করতেন।
ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন আফতাবের মা–বাবা। ছেলের লাশ দেখে লাশঘরের সামনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন বাবা মোহাম্মদ মুছা। এ সময় বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তাহসিনের মা।
তার ভাই মো. তানভীর আজাদীকে বলেন, সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আমার ভাইয়ের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল। ইট–বালুর ব্যবসা করতে হলে তাকে চাঁদা দিতে হবে বলে বারবার আমার ভাইকে হুমকি দিয়ে আসছিল। এ কারণে আমার ভাই দুই মাস আগে আদালতে জিডি করেছিলেন।
উল্লেখ্য, সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানা সংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টির বেশি মামলা রয়েছে। গত ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করেছিল। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনের মালিকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন সাজ্জাদ। চাঁদার জন্য তার দুই সহযোগীকে নিয়ে ওই ভবনে গিয়ে গুলি করেছিলেন। অস্ত্রসহ সাজ্জাদ এবং তার আরো দুই সহযোগীর ওই ভবনে প্রবেশের সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশকে দেওয়া হয় বলে এলাকাবাসী জানান।
এর আগে ২৯ আগস্ট বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন–কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে এই খুন। ডাবল মার্ডারের ঘটনায় হওয়া দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।