আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো জনমুখী নেতৃত্ব বিরল। তাই তিনি কেন্দ্রীয় পদ-পদবি ছাড়াই জাতীয় নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত। তাঁর সকল অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে একে পদক্ষেপ নি”েছন। চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল দুপুরে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কাজির দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত সভায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন তিনি।
কাদের বলেন, একজন রাজনীতিবিদের সবচেয়ে বড় অর্জন জনগণের ভালোবাসা। মহিউদ্দিন চৌধুরী তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছেন। সেদিক দিয়ে আমি বলব, তিনি একজন সফল রাজনীতিবিদ। তিনি চট্টগ্রামের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। চট্টগ্রামের স্বার্থ রক্ষায় তিনি সবসময় সো”চার ছিলেন। তিনি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর চট্টগ্রামের উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। পরে বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস’ায়ও বিএনপির এক নেতাকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। আজকের রূপসী চট্টগ্রাম তাঁরই অবদান। কাদের বলেন, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের উন্নয়নে তিনি সব সময় সজাগ ছিলেন। তিনি দেশের রাজনীতিতে একটা ব্রান্ড। তিনি মেয়র থাকাকালীন একজন রাজনীতিক নয়, দক্ষ প্রশাসক হিসেবে দীর্ঘ ১৭ বছর শিক্ষা ও স্বাস’্য খাতে সেবামূলক ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিলেন। সমাজ কল্যাণে জনপ্রতিনিধি হিসেবে চট্টগ্রামের স্বার্থ রক্ষায় সর্বো”চ অবদান রেখে গেছেন। এছাড়া কোনো রকম কর না বাড়িয়ে সেবা প্রদান করেছেন। স’ানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি এই নগরকে পরি”ছন্ন করে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
দলের জন্য মহিউদ্দিন অনেক ত্যাগ করেছেন উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, তিনি এক সময় শুরু করেন শ্রমিক রাজনীতি। করেছিলেন যুবলীগ। ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর মৌলভি সৈয়দের নেতৃত্বে গঠন করেন মুজিব বাহিনী। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে দলের পতাকা আঁকড়ে ধরেন। বারবার কারাবরণ করেছেন।
তিনি বলেন, রাজনীতিতে আজকে সৌজন্য পোস্টার আছে, সৌজন্য বিলবোর্ড আছে, সৌজন্য ব্যানার আছে; কিন’ সৌজন্যবোধ হারিয়ে যা”েছ। কিন’ মহিউদ্দিন ভাই এক্ষেত্রেও ছিলেন বিরল। সবার সঙ্গে তার ছিল সুসম্পর্ক।
চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল : ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমরা প্রস’তি নি”িছ, চট্টগ্রামের মানুষের আরেকটি দাবি মেটানোর; তা হলো মেট্রোরেল। এ জন্য পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্ণফুলী টানেল এক বছরের মধ্যে নির্মিত হবে। এতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের উন্নয়ন হবে, কঙবাজারের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
ওয়ান সিটি টু টাউন : কাদের বলেন, কর্ণফুলী টানেলের কাজ সমাপ্ত হলে কঙবাজার-চট্টগ্রামের সংযোগ সহজ হবে। এতে চট্টগ্রামের চিত্র আমূল পাল্টে যাবে। তখন সাংহাই নগরীর মতো চট্টগ্রাম হবে ওয়ান সিটি টু টাউনের মতো।
তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেনে উন্নীত করেছি। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিপ্লব ঘটবে। প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। আমরা চট্টগ্রামের মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই, শেখ হাসিনা সব দাবি পূরণ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী তাক লাগিয়ে দিয়েছেন : নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার বিশাল পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রী সারা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। যে দুঃসাহসে তিনি অসাধ্য সাধন করেছেন, তা বিশ্বে বিরল। এর মাধ্যমে বিশ্ব ও বিশ্বব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন আমরা বীরের জাতি। আমরা নিজেদের টাকায় সব করতে পারি।
বিএনপি এখন নালিশ পার্টি : বিএনপি এখন বাংলাদেশ ন্যাশনাল নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে দাবি করে কাদের বলেন, বিএনপি রাজনীতিকে বিদেশি দূতাবাসের দরজায় নিয়ে গেছে। তারা কিছু করতে পারছে না। দেশে-বিদেশে নালিশের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে। বিএনপি দেশের মানুষের কাছে নালিশ দিতে চায় না। তারা নালিশ দিতে যায় বিদেশিদের কাছে। তারা অগণতান্ত্রিক পথ খুঁজছে। এখন তারা মরণ কামড় দিতে চায়। এদেশের সচেতন জনতা তা প্রতিহত করবে।
তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এদেশের মালিক জনগণ। জনগণই তাদের সরকার নির্বাচন করবে। কোনো বিদেশি আর সংস’ার ই”ছায় আমরা ক্ষমতায় বসিনি। বিএনপির রাজনীতি কখনও সরাসরি সন্ত্রাস আর কখনও আগুন সন্ত্রাসে পরিণত হয়েছে। এছাড়া অপপ্রচার, গুজবকে তারা হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে। তারা এসব পথ থেকে এখনও সরে আসতে পারেনি।
তিনি বলেন, বিএনপি এখন সামপ্রদায়িক শক্তিকে উসকানি দি”েছ, পৃষ্ঠপোষকতা করছে। রাজনীতি করলে জনগণের মুখের ভাষা, চোখের ভাষা বুঝতে হবে। তাই বলব, মাটি ও মানুষের কাছে ফিরে আসুন।
কাদের বলেন, ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য যারা দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেগে উঠেছে। চট্টগ্রামকে আবারও বীরত্বের বেশে দেখতে পেলাম। বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধরে রাখতে পারলে আবারও চট্টগ্রাম শেখ হাসিনার দুর্গে পরিণত হবে।
আগামী ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কাদের। এছাড়া ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিটি ভোটারের মন জয় করা এবং ভোটারদের ঘরে ঘরে নৌকার বার্তা নিয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিউদ্দিনের সন্তান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা জন্মেছিলেন বলেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো অনেক রাজনৈতিক কর্মীর সৃষ্টি হয়েছিল। তারাই বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে কাজ করে যা”েছন। এরাই শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে পথেঘাটে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতভিন্নতা থাকতে পারে। দলের ভেতরে কোনো বিরোধ নয়, বিভেদ নয়। তিনি বলেন, আগামী চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে নেত্রী নৌকা প্রতীক দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিমকে। তার বিজয় নিশ্চিত করা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন গণমানুষের নেতা। তাঁর কাছে আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। আমি যখন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম, তখন থেকেই বুঝেছি তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারদর্শী। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে দুঃসাহস প্রকাশ করেছি তা মহিউদ্দিন ভাইয়ের কারণে। আজ স্বীকার করি, চট্টগ্রামের কথা বলার জন্য কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই। এই শূন্যতা পূরণে কালেকটিভ লিডারশিপ চাই।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চসিক মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী দলের সীমানা পেরিয়ে সর্বজনীন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। আপনাদের দোয়া নিয়ে নির্বাচিত হলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকব।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, আমার বাবার একজন যোগ্য শিষ্য হিসেবে মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামকে এত বেশি কাছে টেনেছিলেন যে, আমি তা উপলব্ধি করেছি তাঁর মৃত্যুর পর।
মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার সরকার ও ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, এম জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, হাসান মাহমুদ শমসের, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, আবুল মনছুর, বখতেয়ার উদ্দীন খান, সাইফুদ্দীন খালেদ বাহার, মোরশেদ আক্তার চৌধুরী, কাজী আলতাফ হোসেন, মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, মো. আসিফ খান প্রমুখ।
উপসি’ত ছিলেন হাজী সফর আলী, শেখ মাহমুদ ইসহাক, অ্যাডভাকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, হাজী জহুর আহমেদ, হাজী মো. হোসেন, জালাল উদ্দীন ইকবাল, দিদারুল আলম চৌধুরী, আব্দুল আহাদ, মো. আবু তাহের, ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী, মো. শহীদুল আলম, নির্বাহী সদস্য হাজী মো. ইয়াকুব, গাজী শফিউল আজিম, জাফর আলম চৌধুরী, নেছার উদ্দীন মঞ্জু, মহাব্বত আলী খান, মোহাম্মদ জাবেদ ও হাজী বেলাল আহমেদ।
এর আগে সকাল ১০টায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবর জিয়ারত এবং পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।