চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মহাসড়কের উপর কাভার্ডভ্যান রাখতে নিষেধ করায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বিক্রয় প্রতিনিধি মাথা ফাটালো মো.আজাদ উদ্দিন (৩৮) নামে এক ট্রাফিক পুলিশের।
আহত পুলিশ কনস্টেবল আজাদ উদ্দিন বিগত এক বছর ধরে উপজেলার কেরানীহাট ট্রাফিক পুলিশ বক্সে কর্মরত এবং লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার বিবিরহাট গ্রামের চর আফজল নগর এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে।
আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকালে উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কেরানীহাট হক টাওয়ারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত বিক্রয় প্রতিনিধি আবু বক্কর (৩২) উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড নাপিতের চর এলাকার সোনা মিয়ার ছেলে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ঘটনায় কনস্টেবল আজাদ উদ্দিন বাদী হয়ে বিক্রয় প্রতিনিধি আবু বক্করকে একমাত্র আসামি করে সোমবার সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ বিক্রয় প্রতিনিধিকে গ্রেপ্তার করেছেন।
আহত কনস্টেবল আজাদ উদ্দিন বলেন, বিক্রয় প্রতিনিধি আবু বক্কর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কেরানিহাট এলাকায় গাড়ি রেখে একটি দোকানে মালামাল সরবরাহ করছিল। তখন তাকে আমি গাড়ি অন্যত্র সরিয়ে রাখতে বললে সে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ শুরু করেন। তখন আমি এবং আমার টিআই স্যার সেখান থেকে সরে এসে বিষয়টি ওই মার্কেটের মালিককে জানাই। পরে ওই বিক্রয় প্রতিনিধি পুনরায় আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করতে থাকে।
এ সময় আমি তাকে বাধা দিলে সে একটি স্টিলের টুল দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করেন। এতে আমার মাথা ফেটে যায়। পরে আমি সেখান থেকে দূরে চলে আসলে সে আমাকে লক্ষ্য করে একটি ইট নিক্ষেপ করেন। পরে আমার সহকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত বিক্রয় প্রতিনিধি আবু বক্করের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন থানায় এসেছি। পরবর্তীতে ফ্রি হয়ে এ বিষয়ে আপনাকে বিস্তারিত জানাবো।
সাতকানিয়ার কেরানিহাট ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, সকালে একটি কাভার্ডভ্যান মহাসড়কের উপর গাড়ি রেখে মালামাল নামাচ্ছিল। ফলে যানজটের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় আমি কনস্টেবল আজাদকে গাড়িটি অন্যত্র সরিয়ে দিতে বলি। তখন তার সাথে সেখানে থাকা একজন বিক্রয় প্রতিনিধির কথা কাটাকাটি হয়।
পরে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। এর ঠিক আধ ঘন্টা পর ওই বিক্রয় প্রতিনিধি পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ শুরু করলে কনস্টেবল আজাদ তাকে বাধা দেন। এ সময় উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ওই বিক্রয় প্রতিনিধি একটি স্টিলের টুল দিয়ে কনস্টেবল আজাদের মাথায় আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায়। এ ঘটনাটি আমরা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আহত অবস্থায় এক পুলিশ কনস্টেবলকে সকালে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার মাথায় দুটি সেলাই করা হয়েছে৷ তাকে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। এরপর যদি বমি, খিচুনি ও অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে সিটিস্ক্যান করে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযুক্ত ব্যক্তি, আহত কনস্টেবল ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেছি। এ ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ায় কনস্টেবল আজাদ উদ্দিন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বিক্রয় প্রতিনিধিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।