সীতাকুণ্ড মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল আলম ও কনস্টেবল সাইফুল ইসলামকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে থানায় মামলা রেকর্ডের পর গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম আদালতে প্রেরণ করলে ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে আরো তিনজনকে। তারা হলেন, মো. রিপন (৩৫), হারুন (৩৩) ও ব্যবসায়ীর গাড়িচালক রাজু (২৫)। তারা পলাতক রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সীতাকুণ্ড মডেল থানা পুলিশ বিস্তারিত কোনো তথ্য দিচ্ছে না। তবে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০ ডিসেম্বর সকালে আবু জাফর নামে এক ব্যক্তি একটি পিকআপ গাড়ি কিনতে সীতাকুণ্ডে আসেন। কিন্তু দরদামে বনিবনা না হওয়ায় তিনি গাড়িটি না কিনে সন্ধ্যায় ফিরে যাবার সময় পৌরসদর বাসস্ট্যান্ডে শ্যামলী বাস কাউন্টারে তিনজন পুলিশ সোর্স তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন। একপর্যায়ে তাদের সাথে সীতাকুণ্ড থানার এসআই সাইফুল আলম ও ওসির বডিগার্ড কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম যোগ দেন। তারা নিজেদের ডিবি বলে পরিচয় দেন ও তার কাছে ইয়াবা আছে বলে ভয় দেখিয়ে তাদের গাড়িতে তুলে স্থানীয় জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে পেটে ইয়াবা আছে বলে এক্সরে করান। কিন্তু ইয়াবা না পেলেও তাকে আরো কয়েক স্থানে নিয়ে গিয়ে তার সাথে থাকা গাড়ি কেনার দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা লুটে নেন ও তাকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে একটি গাড়িতে তুলে দেন। গাড়িতে করে তিনি ঢাকায় চলে যান। কিন্তু অনেক কষ্টে অর্জিত টাকা এভাবে লুটে নেয়ায় আবু জাফর তা মেনে নিতে পারেননি। তিনি সুবিচারের আশায় সীতাকুণ্ড থানায় এসে ঘটনা জানান। চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারও ঘটনাটি জানতে পেরে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশ দিলে তদন্তে নামে পুলিশ। পরে আবু জাফর আবার সীতাকুণ্ডে এসে সংশ্লিষ্টদের পরিচয় জানতে পারেন এবং সীতাকুণ্ড থানার এসআই সাইফুল আলম ও কনস্টেবল সাইফুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এদিকে মামলা দায়েরের পর প্রথমদিকে এসআই সাইফুল ও কনস্টেবল সাইফুল পালিয়ে গেলেও পুলিশ সুপারের চাপে বৃহস্পতিবার রাতে তারা থানায় এসে আত্মসমর্পণ করলে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, গত বুধবার রাত ৯টার দিকে গোপন খবরের ভিত্তিতে সীতাকুণ্ড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইয়াবা উদ্ধারে যান থানার এসআই সাইফুল ইসলাম। এ সময় তিনি ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লার দেহরক্ষী কনস্টেবল সাইফুল ইসলামকেও সঙ্গে নেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক হাজারের মতো ইয়াবাসহ এক পাচারকারীকে তাঁরা আটক করেন। ওই পাচারকারী আবার পুলিশের সোর্স। ইয়াবা রেখে পাচারকারীকে ছেড়ে দেন এসআই সাইফুল। কিন্তু ইয়াবাগুলোও তিনি থানায় জমা দেননি এবং জব্দও দেখাননি। পুরো বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানার পর তাঁদের প্রত্যাহার করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, জড়িত পুলিশ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জড়িত পুলিশ সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, এক ব্যক্তির ২লাখ ৮০ হাজার টাকা লুট করে নেওয়ার ঘটনায় থানার এসআইসহ দুই পুলিশকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে প্রেরণ করলে ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন। ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন স্যাররা দেখছেন। এখানে আমাদের বলার কিছুই নেই।