সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আদর্শ। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার আদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই। শুধু ধর্মীয় কাজে নয় বরং দুনিয়ার কাজেও তিনি আমাদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেছেন তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের (সা.) মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সুরা আহজাব : ২১) রাসুল (সা.) এর আনুগত্য আল্লাহপ্রীতির নিদর্শন। তাকে মান্য করলে পাওয়া যাবে মহান আল্লাহর ভালোবাসা। তাই আল্লাহকে ভালোবাসতে চাইলে আগে নবীজির (সা.) নিখাদ আনুগত্য লাগবে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে আপনি বলুন যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ করো আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সুরা আলে ইমরান : ৩১) মহান আল্লাহ কর্তৃক নবীজির (সা.) আনুগত্যের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার আনুগত্য মানে মহান আল্লাহর আনুগত্য। কারণ তিনি আল্লাহর বার্তাবাহক। মহান আল্লাহর কথাগুলো তিনি পৌঁছে দেন মানুষের মধ্যে কাউকে কোনো কাজে বাধ্য করা তার দায়িত্ব নয়। মহান আল্লাহ বলেন যে ব্যক্তি রাসুলের (সা.) আনুগত্য করল সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে মুখ ফিরিয়ে নিল আমি আপনাকে তাদের পর্যবেক্ষকরূপে পাঠাইনি। (সুরা নিসা : ৮০) অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন আপনি তাদের ওপর জোর–জবরদস্তিকারী নন। (সুরা গাশিয়াহ : ২২) নবীজির অবাধ্যতা মানে মহান আল্লাহর অবাধ্যতা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করে সে আল্লাহরই আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যাচরণ করে সে আল্লাহরই অবাধ্যাচরণ করে। যে ব্যক্তি রাসুল (সা.) কে মহব্বত করবে সে জান্নাতে তার সঙ্গে থাকবে। হাদিসে এসেছে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি আমার সুন্নত জিন্দা করে সে আমাকে ভালোবাসে। আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকবে।
আল্লাহর বিধান প্রতিপালন ও প্রিয় নবীজি (সা.) এর সুন্নাতের অনুসরণই দুনিয়ার শান্তি ও পরকালে মুক্তির একমাত্র পথ। পবিত্র কুরআনের বর্ণনায় প্রিয় নবীর (সা.) ভালোবাসা মুমিনের ঈমান আর তার রেখে যাওয়া আদর্শ তথা সুন্নাতের অনুসরণই হচ্ছে তাকে ভালোবাসার প্রমাণ। মহব্বতের ধারাবাহিকতা হলো আল্লাহর প্রতি মহব্বত, রাসুলের প্রতি মহব্বত, আল্লাহ ও রাসুলের প্রিয়জনদের প্রতি মহব্বত, পিতা–মাতার প্রতি মহব্বত, স্বামী–স্ত্রীর প্রতি মহব্বত, সন্তানের প্রতি মহব্বত, ভাইবোনের প্রতি মহব্বত, আত্মীয়স্বজনের প্রতি মহব্বত, পাড়া–প্রতিবেশীর প্রতি মহব্বত, স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি মহব্বত, বিশ্ববাসীর প্রতি মহব্বত, সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রতি মহব্বত। আল্লাহকে ভালোবাসার জন্য রাসুল (সা.) এর পথ অনুসরণ করতে হবে। মানুষের বিশ্বাস, আনুগত্য, অনুসরণ তার ভালোবাসার সাথে সম্পৃক্ত। মানুষ যাকে ভালোবাসে তাকেই বিশ্বাস করে ও অনুসরণ করে। তাই আল্লাহ ও তার রাসুলের (সা.) প্রতি অন্তরে ভালোবাসা থাকাও ঈমানের অংশ। আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ভালোবাসা এবং তাদের ভালোবাসাকে নিজের জীবন ও পার্থিব সব কিছুর ওপর প্রাধান্য দেওয়া ছাড়া মুমিন হওয়া যায় না। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি (সা.) বলেছেন তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পায়। এর মধ্যে প্রথমটি হলো আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসা তার কাছে আল্লাহ ও তার রাসুল বাকি সব কিছুর চেয়ে বেশি প্রিয়। কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন (হে নবী)! আপনি বলুন তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা–মাতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই–বোন, তোমাদের বংশ, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের এমন ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ কর ; আল্লাহ তায়ালা ও তার রসুল এবং তার রাস্তায় জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় না হয় তাহলে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। (সুরা তওবা : ২৪)
আল্লাহকে পেতে হলে মহানবী (সা.) কে ভালোবাসতে হবে। এটাই প্রধান শর্ত। রাসূল (সা.) খুশি হলে আল্লাহ খুশি। রাসূল (সা.) অখুশি হলে আল্লাহ অখুশি। তাই রাসূলের (সা.) প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বত রাখা ঈমানের অঙ্গ। রাসূলের (সা.) প্রতি ভালোবাসা ছাড়া কেউ মুমিন বলেই গণ্য হবে না। মুমিন হতে হলে মহানবী (সা.) কে ভালোবাসতেই হবে। প্রিয় নবির (সা.) ভালোবাসা পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার অন্যতম শর্ত। মুমিন মুসলমানের ঈমান পরিপূর্ণ হয়েছে কিনা তা বুঝার অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে রাসুলুল্লাহর (সা.) ভালোবাসা। রাসুলের (সা.) প্রতি ভালোবাসা যত বাড়বে রাসুলের আনুগত্যও তত বাড়বে। এর ফলে আল্লাহতায়ালাও সন্তুষ্ট হবেন। মহান আল্লাহর ভালোবাসা পেতে রাসুলের (সা.) পথ অনুসরণ করতে হবে। সাহাবিরা আল্লাহ ও তার রাসুলকে (সা.) অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আল্লাহর ও তার রাসুলের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে এমন কি নিজের জীবন দিয়ে দিতেও প্রস্তুত থাকতেন তারা। হজরত আনাস (রা.) বলেন এক সাহাবি একবার আল্লাহর রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসুল! কেয়ামত কবে হবে? তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন কী প্রস্তুতি নিয়েছেন কেয়ামতের? সাহাবি জবাব দিলেন আমি আল্লাহ ও তার রাসুলকে (সা.) ভালোবাসি এটাই আমার প্রস্তুতি। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন নিশ্চয়ই যাকে আপনি ভালবাসেন কেয়ামতের দিন তার সাথেই থাকবেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন ইসলাম গ্রহণের পর আমাদের কাছে সবচেয়ে খুশির বিষয় ছিল নবিজির (সা.) এই কথাটি যাকে আপনি ভালবাসেন কেয়ামতের দিন তার সাথেই থাকবেন। আমি আল্লাহ ও তার রাসুলকে (সা.) ভালোবাসি। হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত ওমরকেও (রা.)। তাই আশা রাখি আখেরাতে আমি তাদের সাথেই থাকব যদিও তাদের মতো আমল করতে পারিনি। আমরাও যদি যথার্থভাবে আল্লাহর রাসুলকে (সা.) ভালোবাসতে পারি সব কাজে তাকে অনুসরণ করতে পারি আশা করা যায় আমরাও আল্লাহর রাসুলের (সা.) সাথেই থাকবো। আল্লাহতাআলা আমাদের তওফিক দান করুন! আমিন।
লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।