শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী আজ। দুর্গাপূজার শেষ পর্বের পূজা শুরু হবে আজ সকালে মহানবমী পূজার মধ্যদিয়ে। গতকাল সন্ধিপূজার মাধ্যমে শুরু হয় মহানবমীর আনুষ্ঠানিকতা। অসুর বধ এবং বিজয়ের মাধ্যমে এর একদিন পরই মহাদশমী; বিসর্জনের মধ্যদিয়ে বিদায় নেবেন মা দুর্গা। আজ ১২ অক্টোবর শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হবে মহানবমীতে দেবী দুর্গার বন্দনা। মহানবমীতে ১০৮টি নীলপদ্মে দেবীদুর্গার পূজা শুরু করবেন পুরোহিতরা, সেই সঙ্গে ১০৮টি বেল পাতা ও ঘি দিয়েও হবে যজ্ঞ। শারদীয় দুর্গোৎসবের গতকাল মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রামে। কুমারী রূপে দেবী দুর্গাকে উপাসনা করলেন সনাতনী ভক্তরা।
এ উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো নগরীর পাথরঘাটায় শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে এবারও আয়োজন করা হয় কুমারী পূজার। এছাড়া নগরীর রাজা পুকুর লেইন পঞ্চমাতা বিগ্রহ বাড়ি ও সেবাশ্রমেও কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সকালে কুমারী মায়ের পূজা দেখতে ও অঞ্জলি দিতে পাথরঘাটায় শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে এবং রাজা পুকুর লেইন পঞ্চমাতা বিগ্রহ বাড়ি ও সেবাশ্রমেও ভক্তদের ঢল নামে।
পাথরঘাটায় শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে কুমারী পূজার জন্য মাতৃভাবের পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে এবছর কুমারী মায়ের আসনে বসানো হয়েছে ১০ বছর বয়সী প্রীত ধর ও ১১ বছর বয়সী শুভদ্রা বিশ্বাসকে। দুই জনের বয়স ১০ বছরের ঊর্ধ্বে হওয়ায় অপরাজিতা নামে পূজিত হন তারা। শাস্ত্রমতে অপরাজিতা নামে পূজিত হলে অভীষ্ট সিদ্ধ লাভ করা যায়। প্রীত ধর সেন্ট স্কলাস্টিকাস স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে এবং শুভদ্রা বিশ্বাস একই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছেন। সকাল সাড়ে ৯টায় মাতৃরূপে ফুল, চন্দন, বেলপাতা, তুলশী পাতা দিয়ে শুরু হয় পূজা আর্চনা। পূজা কার্যক্রম পরিচালনা করেন শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরের পুরোহিত শ্রীমৎ শ্যামল সাধু মোহন্ত মহারাজ।
কুমারী পূজা পরিচালনাকারী শান্তন্বেশ্বরী মাতৃমন্দিরের পুরোহিত শ্রীমৎ শ্যামল সাধু মোহন্ত মহারাজ বলেন, কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। আবার কুমারীরা শুদ্ধতার প্রতীক হওয়ায় মাতৃরূপে ঈশ্বরের আরাধনার জন্য কুমারী কন্যাকে নির্বাচিত করা হয়।
মূলত নারীকে যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে কুমারী পূজা করা হয়। মাটির প্রতিমায় যে দেবীর পূজা করা হয়, তারই বাস্তবরূপ কুমারী পূজায়। কুমারীতে সমগ্রজাতির শ্রেষ্ঠ শক্তি, পবিত্রতা, সৃজনী ও পালনী শক্তিসহ সকল কল্যাণী শক্তি সুক্ষ্মরূপে বিরাজিত। দুর্গা পূজায় কুমারী পূজা হল অশুভ, অন্যায়, পাপ পঙ্কিলতার বিরুদ্ধে ন্যায়, পূর্ণ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনা।
এর আগে পূজার শুরুতে দুই কুমারীকে ফুল, চন্দন, বেলপাতা, তুলসি পাতা দিয়ে মন্ত্রপাঠ আর স্তুতিতে তাদের বন্দনা করা হয়। পূজা শেষে ভক্তরা পুষ্পাঞ্জলি দেন।
শারদীয় দুর্গোৎসবের ৪র্থ দিনে আজ মহানবমী। নবমী তিথিতে দেবী দুর্গার আরাধনা হয় দেবী সিদ্ধিদাত্রী রূপে, যা ঐশ্বরিক। তিনি পার্থিব আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেন এবং অজ্ঞতা দূর করেন। মূলত আজই পূজার শেষ দিন। আগামীকাল রবিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব। নবমীর সন্ধ্যা আরতির পর মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তদের মাঝে বিষাদের সুর বেজে উঠবে সর্বত্র।
আগামীকাল রবিবার বিজয়াদশমী পূজা শেষে দেবীর বিসর্জন হবে, অশ্রুশিক্ত চোখে ভক্তরা বিদায় দেবেন দেবী দুর্গাকে।
মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
সনাতনী শাস্ত্র অনুযায়ী, এ বছর দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে এসেছেন দোলায় বা পালকিতে। পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে এর ফলাফল হয় ‘মড়ক’, যা শুভ ইঙ্গিত নয়। খাদ্যশস্যে পোকা–মাকড়ের আক্রমণ হবে। রোগব্যাধি বাড়বে।
এছাড়া দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্র মতে দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল হয় ‘ছত্রভঙ্গ’। ভক্তদের আরাধনায় দেবীর মন তুষ্ট হলে দেবী হয়ত সবার জীবনে শান্তির সুবাস ছড়িয়ে দিতে পারেন।