মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত

মোরশেদ তালুকদার | শুক্রবার , ১৪ জুন, ২০২৪ at ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গত রাত সোয়া ১২ টার দিকে বিএনপির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেয়া হয়। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম আজাদীকে কমিটি বিলুপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেন। এর আগে ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের নগর কমিটি করা হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে আন্দোলনে ব্যর্থতার পর বিএনপি সারা দেশে তাদের সাংগঠনিক কমিটির পুনর্গঠন এর সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে সেগুলো আগে পুনর্গঠন করা হবে। একইসঙ্গে আন্দোলনে যেসব সাংগঠনিক ইউনিটের দায়িত্বশীল নেতারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন ওইসব কমিটিও পুনর্গঠন করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে মেয়াদোত্তীর্ণ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

কেন্দ্রীয় এক নেতা জানিয়েছেন, নগর বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছিল থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনের। যা তারা করতে পারেননি, বিষয়টি নিয়েও ক্ষুব্ধ দলের হাই কমান্ড। জানা গেছে, ২০২০ সালে দায়িত্বগ্রহণ করা চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদ্য বিলুপ্তকৃত কমিটির নেতৃবৃন্দকে দ্রুততম সময়ে নগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্র। কিন্তু কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও তা পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। তবে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে এসে কেন্দ্রের নির্দেশে তা স্থগিত করা হয়।

এর আগে ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এক বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান নগরের আওতাধীন ১৫টি থানা ও ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত দেন। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটিগুলো গঠনের নির্দেশনা দেন তিনি। এরপর একই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি নগরের আহ্বায়ক, সদস্য সচিব এবং ১৩ জন যুগ্ম আহ্বায়কের সমন্বয়ে পৃথক ১৫টি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিবেদনও জমা দেন তারা। তবে সে বছরের ২৯ মার্চ দলীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে গ্রেপ্তার হন আহ্বায়ক। ১ সেপ্টেম্বর জামিন পান তিনি। এরপর থানা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কমিটি গঠনের লক্ষ্যে প্রতিটি থানায় ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক কর্মী সমাবেশ শুরুও হয়। হালিশহর এবং পাহাড়তলী ছাড়া বাকি ১৩ থানায় সমাবেশও করা হয়। এ দুই থানায় কর্মী সমাবেশ শেষে একযোগে ১৫ থানায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার কথা ছিল। এ অবস্থায় অক্টোবর মাসে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা আসে, থানা কমিটির আগে ইউনিট ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে ইউনিট কমিটি গঠনের আগে সদস্য সংগ্রহেরও নির্দেশনা দেয়া হয়। সে জন্য একটি তথ্য সংগ্রহ ফরমও পাঠায় কেন্দ্র। এর প্রেক্ষিতে অক্টোবর মাসে থানা কমিটি গঠন স্থগিত করা হয়।

পরবর্তীতে ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে নগর বিএনপি। প্রায় সবগুলো ওয়ার্ড প্রস্তুতও হয়। তবে বিএনপির চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় এক নেতা ওই সময় বিদেশে অবস্থান করায় তার নির্বাচনী এলাকাভুক্ত ওয়ার্ডগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি নগর নেতৃবৃন্দ। ফলে ঘোষণা করা হয়নি ওয়ার্ড কমিটি। পরবর্তীতে ওই নেতা দেশে ফিরে এলেও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ ও মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করে কেন্দ্র। তখন আটকে যায় ওয়ার্ড কমিটি গঠন।

বিলুপ্ত আরো তিন সাংগঠনিক কমিটি :

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে গত রাতে। এছাড়া সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং আব্দুল মোনায়েম মুন্না’র নেতৃত্বাধীন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে শিশুকে হত্যা, প্রাইভেট শিক্ষকের মৃত্যুদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধদাফনের ৪৫ দিন পর কবর থেকে গৃহবধূর মরদেহ উত্তোলন