মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরজীবন। ঘরে-বাইরে বাসা কিংবা অফিস সব জায়গাতেই মশার উপদ্রব। মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের নামমাত্র ওষুধ ছিটানো ছাড়া তেমন কোনো কার্যক্রম এখনও পরিলিক্ষিত হচ্ছে না। ফলে নতুন মেয়র তাঁর পথ চলার শুরুতে মশার কবলে পড়তে পারেন বলে অনেকে আশংকা প্রকাশ করেছেন। গত ৮ই মার্চ দৈনিক আজাদীতে ‘মশা কমে না কেন, চসিকের কীটনাশকের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মশক নিধনে গত ১৬ দিন ধরে ‘বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এরপরও নগরে কমছে না মশার উৎপাত। বরং কোথাও কোথাও বাড়ার অভিযোগ আছে। ফলে আরো জোরালো হয়েছে চসিকের ব্যবহৃত কীটনাশকের কার্যকারিতার প্রশ্নটি। অবশ্য ঢাকায় কীটনাশক হিসেবে চতুর্থ প্রজন্মের লার্ভিসাইড ‘নোভালোরন’ (দানাদার বা ট্যাবলেট জাতীয়) ব্যবহার করলেও চসিক তা করে না। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসের এডাল্টিসাইড ব্যবহারেও আছে পার্থক্য। এ অবস্থায় নগরে সোমবার থেকে যৌথভাবে ‘মশা জরিপ’ শুরু করেছে সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী তাঁর প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে প্রতিশ্রুত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন কার্যক্রম সূচনা করেন মশা নিধন কর্মসূচি উদ্বোধন করে। এই কার্যক্রমে মশকনিধন ও পরিচ্ছন্নতাকে প্রথম অগ্রাধিকার দিয়ে উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, মশার বিস্তার নাগরিক দুর্ভোগ ও অস্বস্তির বড় অসহনীয় উপসর্গ। তা নিরসনে প্রথম ২০ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হবে।
তিনি এ অভিযানে নগরবাসীকে সম্পৃক্ত হবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সিটি করপোরেশন মশক নিধনের ওষুধ ছিটাবে এবং প্রকাশ্য স্থান ও নালা-নর্দমার স্তূপকৃত আবর্জনা, বর্জ্য পরিষ্কার করবে। শুধু এভাবেই মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা সম্ভব নয়। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা। নিজ গরজেই বাসা-বাড়িতে মশক প্রজনন ও উৎপত্তিস্থল বিনাশ এবং বর্জ্য-আবর্জনা সরিয়ে ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে।
তিনি সতর্ক করে দেন কেউ নালা নর্দমায় বা খালে ও পানি চলাচলের পথে পলিথিন ও প্লাস্টিক, বর্জ্য-আবর্জনা ফেলতে পারবেন না, ফেললে সেটা হবে দণ্ডনীয় অপরাধ। তিনি উল্লেখ করেন, মশক নিধনে সিটি করপোরেশন যে ওষুধ ছিটায়, সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মশার এই ওষুধের মান নির্ণয়ে তা ঢাকায় ল্যাবে পাঠিয়ে যাচাই-বাছাই করা হবে।
মেয়র আরো বলেন, নগরীর অনেক সড়ক যান ও জনচলাচলের অনুপযোগী। এগুলো এক সাথে সংস্কার বা মেরামত করা সম্ভব নয়। যেগুলোর বেশি বেহাল অবস্থা, সেগুলো আগে-ভাগে মেরামত ও খানা-খন্দক ভরাট করা হবে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সক্ষমতা, ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত-প্রকৌশলগত পরিকল্পনা প্রয়োজন। তাই ধৈর্য ধরতে হবে।
মেয়র ধৈর্য ধরার কথা বললেও নগরবাসী অনেক আগে থেকে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা কী পরিমাণে অতিষ্ঠ, তা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। নগরবাসীর অভিযোগ, বাজেট বাড়লেও মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের উল্লেখযোগ্য তেমন কার্যক্রম দেখা যায় না। বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা হলেও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না। কিউলেঙ মশা মূলত ডোবা, নালা, ড্রেন, পুকুর ঝিল ইত্যাদি স্থানে বংশ বিস্তার করে থাকে শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ শীতের শুরুতে এ মশার উৎপাত বেড়ে যায়। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস মূলত কিউলেঙ মশার মৌসুম বলা যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। মশাকেই যদি নিধন করা না যায়, তাহলে আর কোনো কর্মসূচি সফল হবে বলে মনে হয় না। মেয়র সমীপে নগরবাসীর আবেদন, যে করে হোক, এ শহরের মানুষ যেন মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পায়।