মশারির ভেতর ঘুমাচ্ছিল ঘাতক,বের করে আনল পুলিশ

সম্পর্কের টানাপোড়েনে প্রেমিকাকে খুন

হাবীবুর রহমান | রবিবার , ৬ অক্টোবর, ২০২৪ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

 

 

 

প্রেমের সম্পর্কের টানাপোড়েন। এরপর ডেকে নিয়ে ধমকানো। একপর্যায়ে গলায় একের পর এক ছুরিকাঘাত। ঢলে পড়ে মুহুর্তেই মৃত্যু। গত শুক্রবার রাত আটটায় নগরীর পাঁচলাইশের হাদুমাঝির পাড়ার একটি বিলের পাশে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন মো. তারেক নামে এক তরুণ। তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। অন্যদিকে ভিকটিম ১৭ বছরের কিশোরী মরিয়ম আক্তার সামিরা। তিনি পেশায় গার্মেন্টসকর্মী। তারেক খুনের উদ্দেশ্যেই ধারালো ছুরি নিয়ে ঘটনাস্থলে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন। অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে, এ ধারণা থেকেই পরিকল্পনা করে ব্যবহৃত ছুরি ক্রয় করেন তিনি।

এদিকে ঘটনার পর তাৎক্ষণিক অভিযানে নামে পুলিশ। তথ্য ছিল, আসামি মো. তারেক তরুণীর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ামাত্রই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন এবং পালিয়ে রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনার লিচুবাগান এলাকার আহমদুল হকের কলোনির মামার বাড়িতে গিয়ে উঠেন। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া সেই তথ্যের পিছু নিয়ে পুলিশের একটি টিম সেখানে গিয়ে হাজির হয়। তখন শোয়ার ঘরে মশারির ভেতর ঘুমাচ্ছিলেন ঘাতক তারেক। একপর্যায়ে তাকে ডেকে সেখান থেকে বের করা হয়। হাতে পড়ানো হয় হ্যান্ডকাপ। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার মামাসহ পরিবারের লোকজন। আশেপাশের লোকজনকেও পুলিশ সেখানে ডাকেন। মো. তারেকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। মূলত জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করতেই পাশের লোকজনকে ডাকা হয়। তারও পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুনে ব্যবহার করা ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মো. তারেক খুনের দায় স্বীকার করেছেন। এরপর তাকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ নগরীতে নিয়ে আসেন। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় ভিকটিম তরুণীর ভাই পারভেজ উদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

থানা পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের পাশে থাকা একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘাতক তরুণ পাঁচলাইশ থানাধীন হাদুমাঝির পাড়ার একটি বিলের পাশে থাকা ভবনের পাশে দাড়িয়ে আছে। তাকে খুবই উত্তেজিত দেখাচ্ছিল। সিগারেট ফুঁকছিল। কিছুক্ষণ পর সেখানে ভিকটিম তরুণী আসে। তাদের মধ্যে কিছুটা বাক্য বিনিময় হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে আগে থেকে কিনে রাখা ছুরি বের করে তরুণীর গলায় উপর্যুপরি আঘাত করে তারেক। এতে তরুণী মাটিতে ঢলে পড়ে এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করার একপর্যায়ে ঘাতক তারেক সেখান থেকে সটকে পড়ে।

পুলিশ জানায়, ঘটনার পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্ব দেন সহকারী পুলিশ কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) মো. আরিফ হোসেন ও পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান। পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান আজাদীকে বলেন, প্রেমের সম্পর্কের টানাপোড়নের জের ধরেই মো. তারেক কিশোরী মরিয়ম আক্তার সামিরাকে গলায় মুহুর্মুহু ছুরি চালিয়ে হত্যা করেন। স্থানীয় লোকজন খবর পেয়ে কিশোরীকে সেখান থেকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ভিকটিম ও হত্যাকারীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষিতে এ হত্যা জানিয়ে ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, হত্যাকারী ঘটনার আগে ভিকটিমকে ফোন করে দেখা করার জন্য ডেকে নেন। তিনি আগে থেকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে একটি ছুরি কিনে তার সাথে রাখেন। দেখা হওয়ার পর তাদের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব সৃষ্টির বিষয়ে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়। এই সময় আসামি তাকে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ করে ঝগড়া করতে থাকে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে আসামি ভিকটিমের গলায় একের পর এক ছুরিকাঘাত করেন। শুক্রবার রাত তিনটার দিকে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ঘটনার ছয় ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তিনি আরো বলেন, ঘাতক আর ভিকটিমের মধ্যে তিন বছর ধরেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

উল্লেখ্য, ভিকটিম কিশোরী পটুয়াখালীর বাসিন্দা আর ঘাতক তরুণ ভোলা জেলার বাসিন্দা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতিন মাস পর আজ খুলছে চবি
পরবর্তী নিবন্ধঅবসরের এক সপ্তাহ আগে জীবন থেকেই অবসর