মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সিটি মেয়রের ‘অসন্তুষ্টি’ : চাই সমন্বিত পরিকল্পনা

| শুক্রবার , ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

মশক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে সিটি মেয়র ‘অসন্তুষ্ট’। এ খবরে নগরবাসীর মনের মধ্যে একটা প্রত্যাশা জাগ্রত হয়েছে। সেটা হলো মেয়র মহোদয় তাদের বিষয়ে ওয়াকিবহাল এবং তাদের বিষয়ে ভাবেন। তিনি জানেন, মশার যন্ত্রণা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদের রোধ করা যাচ্ছে না। দৈনিক আজাদীর ১৬ এপ্রিল সংখ্যায় একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, বারবার সতর্ক করার পরও মশক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে গাফেলতি লক্ষ্য করছেন বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তাই বিভাগটির কর্মকর্তাকর্মচারীদের উপর ‘অসন্তুষ্ট’ মেয়র নিজেই রাতের বেলা পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করার ঘোষণা দেন। এসময় পরিচ্ছন্ন ও মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অবহেলা করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। এছাড়া যারা তিন মাসের বেশি সময় ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন তাদের তালিকা প্রস্তুত করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করারও নির্দেশনা দেন। গত মঙ্গলবার টাইগারপাস চসিক কার্যালয়ে পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন মেয়র। তিনি বলেন, এখন থেকে আমি নিজেই রাতে বের হবো। দেখে আসবো কে কাজ করছে, কে করছে না। যারা কাজে অনুপস্থিত থাকবে, তাদের বরখাস্ত করা হবে। কাজ না করলে চাকরি থাকবে না। গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি, হেলদি সিটি ছিল আমার নির্বাচনী ইশতেহারের মূল অঙ্গীকার। আমি তা বাস্তবায়নে কোন ছাড় দেব না।

এসময় মেয়র যেসব সুপারভাইজার, জোন প্রধান ও সুপারিন্টেনডেন্ট যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না, তাদের বদলির ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেন। এছাড়া পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে গতি আনতে মেয়র প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও মালামাল দ্রুত সংগ্রহের নির্দেশ দেন। ডা. শাহাদাত বলেন, নগরবাসীর মশার কামড় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে সফলতা তখনই আসবে, যখন নগরবাসী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সবাই আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

এ কথা অনস্বীকার্য যে ঘাতক মশা বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ সংহারে ভূমিকা রাখছে। সিটি কর্পোরেশন তাদের দমানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু কার্যকর কোনো ফল মিলছে না। মশার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। কয়েল, স্প্রে, ইলেকট্রিক ব্যাট, ঘরোয়া পদ্ধতি কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। নাগরিকদের অসন্তোষের কথা সব সময় শোনা যায়।

জানা যায়, মশা দমনে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অপারেশন টিম আছে। তারা রুটিন করে সকালবিকেল বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্প্রে ও ফগিং (কীটনাশক) কার্যক্রম চালায়। বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন তাঁরা কি জানেন কোন প্রজাতির মশা কোথায় কী পরিমাণ কীটনাশক প্রতিরোধী হয়েছে? তাঁদের কাছে এ বিষয়ে পরীক্ষালব্ধ তথ্য আছে, যা দেখে তাঁরা মশা মারার জন্য কার্যকর ডোজ নির্ধারণ করতে পারবেন? নাকি তাঁরা নিজেরাই নিজেদের ইচ্ছামতো ডোজ নির্ধারণ করছেন, বাড়িয়ে দিচ্ছেন?

অভিযোগে প্রকাশ, কীটনাশকে আর মশা মরছে না; কীটনাশকেও নাকি ভেজাল আছে। কীটনাশকের ভুল প্রয়োগেই মশারা প্রতিরোধী হয় বেশি। অতিরিক্ত প্রতিকূল পরিবেশে মশারা বাঁচার জন্য দেহব্যবস্থার অভিযোজন করতে পি৪৫০ জিন (প্রতিরোধী জিন) কাজে লাগায় এবং ধীরে ধীরে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। কীটনাশক দিয়ে এদের আর ধ্বংস করা যায় না।

আসলে মশা নিধনের সুফল পেতে সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মশার লার্ভা ও পূর্ণাঙ্গ মশা মারার জন্য রাসায়নিক বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। উড়ন্ত পূর্ণাঙ্গ মশা মারা সহজ হলেও লার্ভা নিধন ততটা সহজ নয়। বিশেষত কচুরিপানা, জলজ উদ্ভিদ সম্বলিত জলাশয়, প্রবাহহীন খাল, অপরিচ্ছন্ন ড্রেন, মজাপুকুর ও আবর্জনাযুক্ত স্থানে সরাসরি ঔষধ ছিটানো সুফল দেয় না, কারণ রাসায়নিক ঠিকভাবে লার্ভার গায়ে পৌঁছায় না। অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া, কিউলেক্স ফাইলেরিয়া, এডিস মশা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস রোগ সংক্রমণ করে থাকে। যদিও মশা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা সম্ভব নয়, তবে বংশ বিস্তার রোধের মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এজন্য সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে