মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় লিভারপুল তারকা জোটার মৃত্যু

স্পোর্টস ডেস্ক | শুক্রবার , ৪ জুলাই, ২০২৫ at ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

মাত্র ২৮ বছর বয়সে প্রাণ হারিয়েছেন লিভারপুল ফরোয়ার্ড দিয়েগো জোটা। গতকাল বৃহস্পতিবার স্পেনের জামোরা শহরে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান এই পর্তুগিজ ফুটবলার। ওই দুর্ঘটনায় তার ছোট ভাই আন্দ্রে সিলভাও (২৬) নিহত হয়েছেন। স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কা জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় জোটা ও তার ভাই একটি ল্যাম্বোরগিনি গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন। গাড়িটির টায়ার বিস্ফোরণের পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি সড়ক থেকে ছিটকে পড়ে এবং উল্টে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

দুর্ঘটনাটি ঘটে স্পেনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা জামোরার পালাসিওস দে সানাব্রিয়ায়, ৫২ মহাসড়কে। ঘটনাস্থলেই দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেন উপস্থিত চিকিৎসকরা।

জোটার জন্ম পর্তুগালের পোর্তোতে। তার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন পাসোস দে ফেরেইরার যুব একাডেমিতে। সেখান থেকে ২০১৬ সালে যোগ দেন স্প্যানিশ ক্লাব আতলেতিকো মাদ্রিদে। এরপর ২০১৭ সালে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সে পাড়ি জমান। তবে ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কেটেছে লিভারপুলে। ২০২০ সালে ৪০ মিলিয়ন পাউন্ডে ক্লাবটিতে যোগ দেন জোটা। ইয়ুর্গেন ক্লপের অধীনে এফএ কাপ ও লিগ কাপ জেতার পর, সদ্যসমাপ্ত ২০২৪২৫ মৌসুমে নতুন কোচ আর্নে স্লটের অধীনে লিভারপুলকে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা এনে দেন তিনি। দুর্ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্তসহকর্মীরা জানাচ্ছেন গভীর শোক ও শ্রদ্ধা। এই ঘটনার মাত্র দশ দিন আগে শৈশবের প্রেমিকা রুট কার্দোসোকে বিয়ে করেছিলেন জোটা। তাদের সংসারে রয়েছে তিনটি সন্তান। বিয়ের দিনটিকে স্মরণীয় উল্লেখ করে বিয়ের আগের দিন ইনস্টাগ্রামে আবেগঘন একটি পোস্ট করেছিলেন জোটা। সেখানে লিখেছিলেন, ‘এটা এমন একটা দিন, যা আমরা কোনো দিন ভুলবো না।’ রুট বলেছিলেন, ‘আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।’ জোতা উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমিই ভাগ্যবান।’ বিয়ের আনন্দ কাটিয়ে ওঠার আগেই জীবনের পথ থমকে গেল মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায়। এদিকে তার ভাই আন্দ্রে সিলভা খেলতেন পর্তুগিজ দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব পেনাফিয়েলের হয়ে।

এদিকে জোটার মৃত্যুতে মেনে নিতে পারছেন না পর্তুগিজ অধিনায়ক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এক আবেগঘন পোস্টে তিনি লেখেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য। এই তো আমরা জাতীয় দলে একসঙ্গে খেললাম, মাত্রই বিয়েটা করেছো তুমি। তোমার পরিবার, স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য আমার গভীর সমবেদনা। জানি, তুমি সবসময় তাদের সঙ্গেই থাকবে। শান্তিতে ঘুমাও দিয়েগো ও আন্দ্রে। আমরা সবাই তোমাদের মিস করব।’

গত মৌসুমে লিভারপুলের প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয়ে অবদান রাখেন জটা। তার মৃত্যুর পর সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অ্যানফিল্ডের দলটি। ‘দিয়োগো জোটার মর্মান্তিক মৃত্যুতে লিভারপুল ফুটবল ক্লাব স্তব্ধ। ক্লাবকে জানানো হয়েছে যে, ২৮ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় তার ভাই আন্দ্রেসহ স্পেনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।’

লিভারপুল এফসি এই মুহূর্তে আর কোনো মন্তব্য করবে না এবং দিয়োগো ও আন্দ্রের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সতীর্থ এবং ক্লাব স্টাফদের গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে, কারণ তারা একটি অকল্পনীয় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। তাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখব আমরা।’

অ্যানফিল্ডের বাইরে ফুল দিয়ে জোটার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন লিভারপুলের সমর্থকরা। জটাকে কোচিং করানো লিভারপুলের সাবেক কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘দিয়োগো ও তার ভাই আন্দ্রের মৃত্যুতে আমি মর্মাহত। দিয়োগো শুধু একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড়ই ছিল না, অসাধারণ বন্ধু, যত্নশীল স্বামী ও বাবাও ছিল! তোমাকে অনেক মিস করব আমরা!’

জুন মাসেই পর্তুগালের হয়ে নেশনস লিগ জয়ে অবদান রেখেছিলেন জোতা। মাঠের লড়াইয়ে দারুণ পারফর্ম করলেও, মাঠের বাইরেও ছিলেন সবার প্রিয়। তাই তার প্রস্থান সহজে মেনে নিতে পারছে না কেউই। ইতোমধ্যে জোটার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পর্তুগাল ফুটবল ফেডারেশন। ফেডারেশনের সভাপতি পেদ্রো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দিয়োগো জোটা কেবল অসাধারণ খেলোয়াড়ই নয়, একজন অনন্য মানুষও ছিলেন। সতীর্থ ও প্রতিপক্ষ সবার কাছে শ্রদ্ধেয় ছিলেন তিনি। তার হাসি, ইতিবাচকতা এবং দলের মধ্যে প্রভাব ছিল গভীর।’ জোটার মৃত্যুতে ফুটবলবিশ্ব হারাল এক প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে, আর ভেঙে গেল একটি পরিবারের হাসিমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডাবল সেঞ্চুরিতে গিলের যত রেকর্ড
পরবর্তী নিবন্ধমেয়েদের জন্য শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ম্যাচ আয়োজনের প্রতিশ্রুতি বাফুফের