মরুর বুকে ক্রিকেট উদ্যান শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম

আবুধাবী থেকে ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ২২ নভেম্বর, ২০২১ at ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ

ক্রিকেট সংযুক্ত আরবআমিরাতে মোটেও জনপ্রিয় কোন খেলা নয়। ক্রিকেটটা অনেকটা শখের বসেই খেলে থাকে আরবরা। যদিও একাধিকবার বিশ্বকাপের মত বড় আসরে খেলেছে আরব আমিরাত। তারপরও ক্রিকেটের মোটেও উন্নতি নেই মরুর দেশটির। নিজেরা ক্রিকেট তেমন না খেললেও ক্রিকেট আয়োজনে এখন বিশ্বসেরা আরব আমিরাত। যদিও দেশটির শারজাহ স্টেডিয়ামের রয়েছে বিশাল এক ঐতিহ্য। দীর্ঘ দিন থেকে এই স্টেডয়ামটি ক্রিকেটের বড় বড় আসর আয়োজন করে আসছে। তবে এখন ঐতিহাসিক সেই শারজাহ স্টেডিয়াম অনেকটাই আড়াল চলে গেছে। কারন দেশটির দুবাই এবং আবুধাবীতে গড়ে উঠেছে দৃষ্টি নন্দন দুটি স্টেডিয়াম। শুধু দৃষ্টি নন্দন বললে ভুল হবে। এই দুটি স্টেডিয়াম এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা স্টেডিয়াম। বিশ্ব ক্রিকেটের বড় বড় ইভেন্ট আয়োজনের সবচাইতে বড় মঞ্চ এখন আরব আমিরাত। দেশটির তিনটি স্টেডিয়ামের মধ্যে আবুধাবীর শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম যেন মরুর বুকে ক্রিকেটের এক নন্দন কানন।
দারুন স্থাপত্য শৈলিতে গড়া স্টেডিয়ামটির প্যাভেলিয়ন অংশে রয়েছে বিশাল এক ছাদ। যা বিশ্বের অন্য কোন স্টেডিয়ামে দেখা যায় না। অপর প্রান্তে রয়েছে গ্যালারী। দুপাশের জায়গাটা রাখা হয়েছে খালি। যেখানে মানুষ মাটিতে বসে খেলা উপভোগ করে। স্টেডিয়ামটির ধারন ক্ষমতা প্রায় ২০ হাজার। প্রায় ২২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত স্টেডিয়ামটি খুলে দেওয়া হয় ২০০৪ সালে। ২০০৬ সালের ১৮ এপ্রিল ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম। এটিকে কেবলই একটি স্টেডিয়াম বললে ভুল হবে। বলা যায় এটি একটি কমপ্লেঙ। স্টেডিয়ামের এক পাশে রয়েছে আরো দুটি ক্রিকেট মাঠ। যেখানে নির্বিঘ্নে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা যায়। দুটি মাঠেই রয়েছে ফ্লাড লাইট সহ আন্তর্জাতিক মানের সব সুযোগ সুবিধা। এছাড়া স্টেডিয়ামের সামনে রয়েছে সারি সারি ক্রিকেট নেট। রয়েছে একাডেমি মাঠ। যেখানে এক সাথে ছয়টা দল অনুশীলন করতে পারে। রয়েছে টেনিস কোর্ট, বাস্কেটবল কোর্ট, বাচ্চাদের খেলার মাঠ। স্টেডিয়ামের দুই পাশে রয়েছে অন্তত ছয়টি ফুটবল মাঠ। সব মিলিয়ে শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামকে ঘিরে রয়েছে ১২টি খেলার মাঠ। মরুভুমির বুকে প্রায় কয়েকশ একর এলাকা জুড়ে এই স্টেডিয়াম কমপ্লেঙ। পার্কিং করতে পারে অন্তত ২০ হাজারেরও বেশি গাড়ি। এই বিশাল গাড়ির বহর চোখের পলকেই বের হয়ে যেতে পারে। দর্শকদের স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে রয়েছে অন্তত দশটি গেইট। যেখান দিয়ে খেলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে দর্শকরা বের হয়ে যেতে পারে নির্বিঘ্নে। স্টেডিয়ামের চার পাশের বেশ কয়েকটি মাঠ আবার ভাড়া দেওয়া হয়। যে কেউ মাঠ ভাড়া নিয়ে খেলতে পারে। পুরো কমপ্লেঙ জুড়ে রয়েছে আলোর ঝলকানি। রাত কিংবা দিন যেখানে সমান। সন্ধ্যা নামতেই বাচ্চাদের মেলা বসে স্টেডিয়ামের মাঠ গুলোতে। তবে তাদের বেশিরভাগই ফুটবল, বাস্কেটবল কিংবা টেনিস প্রশিক্ষণ নেয়। ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁকটা বলতে গেলে কম। তারপরও আবুধাবী যেন ক্রিকেটের নন্দন কানন। কেনি বিশ্বকাপ কিংবা বিশ্ব ক্রিকেটের বড় বড় টুর্নামেন্ট গুলো এখানে আয়োজিত হয় তা সহজেই অনুমান করা যায়। কারন এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক সব সুযোগ সুবিধা। স্টেডিয়াম কমপ্লেঙের চার পাশে ধুধু মরুভুমি হলেও স্টেডিয়ামের মাঠগুলো যেন সবুজ গালিচায় আচ্ছাদিত। মরুর বুকে এত সবুজ মাঠ সত্যিই অভাবনীয়। মাঠগুলোর পরিচর্যায় নেই কোন ধরনের অবহেলা। প্রতিনিয়ত কিভাবে আরো সুন্দর আর সতেজ রাখা যায় মাঠগুলোকে সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ। স্টেডিয়াম এবং পুরো কমপ্লেঙের মালিকানা আবুধাবী স্পোর্টস কাউন্সিল। স্টেডিয়ামের পাশেই রয়েছে আবুধাবী ক্রিকেট কাউন্সিলের অফিস। সব মিলিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের প্রান কেন্দ্র এখন আরব আমিরাত। আর সে আমিরাতের বুকে অনিন্দ্য সুন্দর ক্রিকেট উদ্যান শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম আবাহনী ও মুক্তিযোদ্ধা লাল দলের জয়
পরবর্তী নিবন্ধ২২৩ রানে ইনিংস শেষ করলো চট্টগ্রাম