বেশ কিছুদিন ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন হালদাপাড়ের জেলে এবং ডিম সংগ্রহকারীরা। কিন্তু মা মাছ ডিম ছাড়েনি। এর মাঝে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে এই জো’তে ডিম ছাড়া নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন তারা। অবশেষে তাদের অপেক্ষার অবসান হলো। শঙ্কাও কিছুটা কাটল। গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে হালদায় নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। বর্তমানে পূর্ণিমা তিথির জো চলছে। সাধারণত জো’র পরপর মাছের ডিম ছাড়ার নিয়ম। আর ডিম ছাড়ার পূর্বে নমুনা ডিম ছাড়ে। তাই ডিম সংগ্রহকারীসহ সংশ্লিষ্টদের ধারণা, জো’র পরেই মা মাছ ডিম ছাড়বে। গত রাত সোয়া ১২টার দিকে হাটহাজারীর গড়দুয়ারা, নয়াহাট ও সিপাহী ঘাটে নমুনা ডিম পাওয়া যায় বলে ডিম সংগ্রহকারীরা জানিয়েছেন। গড়দুয়ারার কামাল সওদাগর জানান, তিনি ২শ গ্রাম ডিম পেয়েছেন। অন্যরাও একশ থেকে দুইশ গ্রাম করে ডিম সংগ্রহ করেছেন।
ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, এপ্রিল মাসের পর থেকে এই পূর্ণিমা পর্যন্ত তিনটি জো চলে গেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি কিংবা আবহাওয়া শীতল না থাকায় এতদিন ডিম ছাড়েনি। গত ক’দিন থেকে বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই আবহাওয়ায় শীতল ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। শীতল আবহাওয়ার মধ্যে গত রাতে ডিমের নমুনা দেখা দিয়েছে। মধ্যম মাদার্শার আশু বড়ুয়া জানান, নদীর বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু নমুনা ডিম পাওয়া যাচ্ছে। রাতে ভাটার মধ্যে অথবা আজ বুধবার পূর্ণিমা জো’র শেষ লগ্নে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। নমুনা ডিম ছাড়ার বিষয়টি তিনি হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া এবং হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন বলে জানান।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়ে। পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথি ডিম ছাড়ার উপযুক্ত সময়। এসব তিথিতে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণের ফলে নদীতে ঢলের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে নদীর উপর অংশ খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ি ও উত্তর ফটিকছড়িতে প্রবল বর্ষণের ফলে নদীর সাথে সংযুক্ত ছড়া ও শাখা খালের মাধ্যমে পাহাড়ি ঢল হালদা নদীতে এসে পড়ে। ঢলের সময় মা মাছ ডিম ছাড়ে।
এর আগে ডিম আহরণকারীরা জানিয়েছিলেন, নদীতে মাছের প্রচুর আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। গত সোমবার থেকে পূর্ণিমার জো শুরু হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জো’র প্রভাব থাকবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কেটে গেলে নদীতে ঢল সৃষ্টি হওয়ায় মতো বৃষ্টিপাত হলে হয়ত মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে।
হালদা নদীতে লবণাক্ত পানি
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে হালদা নদীতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে। প্রজনন মৌসুমে নদীতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করায় মা মাছের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ডিম আহরণকারীরা। নদীপাড়ের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, পূর্ণিমাকে সামনে রেখে জোয়ারের পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে ইয়াসের প্রভাবে যোগ হয়েছে বর্ধিত জোয়ারের পানি। গত সোমবার থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করলে জোয়ারে প্রবেশ করতে শুরু করে লবণাক্ত পানি।
হালদাপাড়ের মদুনাঘাট বাজারের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, বাজারের মসজিদে হাঁটু পানি প্রবেশ করেছে। রাতে জোয়ারে পানি আরো বৃদ্ধি পেলে অনেক দোকানে পানি ঢুকতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, নদীর ভাটির দিকে এখনো পানিতে লবণাক্ততা বাড়েনি। যদি ভাটির দিকে লবণ পানি প্রবেশ করে তাহলে মা মাছের ক্ষতি হতে পারে।
হালদা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদাপাড়ের মানুষের কাছ থেকে লবণাক্ত পানির বিষয়ে জেনেছি। বুধবার (আজ) নদীতে গিয়ে পানি পরীক্ষা করব। পরীক্ষার পর জানা যাবে লবণাক্ততার মাত্রা।