আনোয়ারায় ইলিশের কেন্দ্র উঠান মাঝির ঘাটের কাছেই পারকি বাজার। সাগর লাগোয়ো এই বাজারে ১৫০ গ্রাম সাইজের এক কেজি ইলিশ গতকাল শুক্রবার বিক্রি হচ্ছিল ৭০০ টাকা করে। তা দেখে রিকশা চালক আবদুল আলিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, সারাদিন রিকশা চালিয়ে ৫০০–৬০০ টাকা পাই। এক কেজি ছোট ইলিশের দাম একদিনের আয়ের চেয়ে বেশি– এ কেমন সময় এল!
নিম্নবিত্ত আবদুল আলিমের কথা তো অনেক দূর, মধ্যবিত্তের পাতেও এখন ইলিশ উঠছে না। সাগর তীরের আড়তে গতকাল প্রতি কেজিতে ৬/৭টা ধরে এমন মাছ বিক্রি হচ্ছিল ৭০০/৮০০ টাকা, কেজিতে ৪টা ধরে এমন ইলিশ ৯০০/১০০০ টাকা আর কেজির ওপরে ১৮০০/২০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সাগরপাড়ে যদি দাম এমন হয় সাধারণ ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে কেমন হতে পারে তা সহজে অনুমেয়।
আনোয়ারার গহিরা উঠান মাঝি ঘাটের মৎস্যজীবী লোকমান বলেন, এখন ইলিশ ধরার ভরা মৌসুম। ভাদ্র–আশ্বিন এ দুই মাসও ইলিশ ধরা পড়বে। এক সপ্তাহ বিরতির পর গত ৩ দিন থেকে অমাবশ্যা তিথির ইলিশ ধরা শুরু হলেও সাগরের নিম্নচাপ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেদের জালে প্রত্যাশিত মাছ ধরা পড়ছে না। তুলনামূলকভাবে গত পূর্ণিমা তিথিতে বেশি মাছ পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
বর্তমানে সাগরে মাছ ধরায় ব্যস্ত আনোয়ারা সমুদ্রোপকূলের দুই হাজারের বেশি মৎস্যজীবী। গতকাল শুক্রবার রায়পুর ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় ইলিশ ঘাট নামে পরিচিত উঠান মাঝির ঘাটে গিয়ে দেখা যায় জেলে ও মাছ প্রক্রিয়াজাতে জড়িতদের ব্যস্ততা। এদিকে বঙ্গোপসাগর ছাড়াও সাঙ্গু নদের গহিরা, জুঁইদন্ডি, বরুমচড়া ও তৈলারদ্বীপ এলাকায়ও জেলেদের মাছ ধরার জালে কিছু ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে চাহিদা ও প্রত্যাশা অনুপাতে তা অনেক কম। কম মাছ ধরা পড়ায় ইলিশের দামও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। যে কারণে নিম্নবিত্ত দূরে থাক, মধ্যবিত্তের কাছে ইলিশ স্বপ্নের বস্ততে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, আনোয়ারা উপজেলার উপকূলীয় রায়পুর, বারশত, জুঁইদন্ডি, বরুমচড়াসহ ১১ ইউনিয়নের ৫ হাজারের বেশি জেলেদের মধ্যে ২ হাজারের বেশি জেলে সাগরে ইলিশ ধরার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমানে বঙ্গোপসাগর উপকূলে জেলেরা মাছ ধরে উপকূলীয়, উঠান মাঝির ঘাট, পড়ুয়াপড়া, গলাকাটা, ফকির হাট (ঘাটকূল), খুইল্যা মিয়া ঘাট, পারকি, জুঁইদন্ডিরসহ বিভিন্ন ঘাটে ইলিশ নিয়ে আসেন। এরপর বেচাকেনা শুরু হয়। অধিকাংশ মাছ চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরাসরি নিয়ে যায় জেলেরা। ঘাটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ইলিশ ঘাট গহিরা উঠান মাঝির ঘাটে। এ ঘাটে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে ব্যস্ততা। কেই জাল বুননে, কেউবা সমুদ্রযাত্রার প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, কেউবা ইলিশ বেচাকেনায়।
মৎস্যজীবী আবদুল মজিদ জানান, গত কয়েক তিথিতে ভালো ইলিশ ধরা পড়েছে। কিন্তু চলতি অমাবস্যার তিথিতে সাগর বৈরী হওয়ায় অতিরিক্ত টেউ ও বাতাস রয়েছে। এ কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ ধরা পড়ছে না। স্থানীয় আড়ৎদারারেরা জানান, শুক্রবার নগরীর ফিশারি ঘাটে কেজিতে ৫/৬টি ধরে এমন ইলিশ বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ২১ হাজার টাকা, কেজিতে ৩/৪টি ধরে এরকম বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৩৬/৩৭ হাজার টাকা আর ১ কেজি সাইজের উপরে বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৬০/৭০ হাজার টাকা করে।
মৎস্যজীবীরা জানান, পূর্ণিমার তিথির চেয়ে অমাবস্যার তিথিতে বেশি ইলিশ ধরা পড়ার কথা। কিন্তু সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিকূল পরিবেশে মাছ ধরা জেলেদের জন্য অনেক কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে।
আনোয়ারা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাশিদুল হক জানান, বর্তমানে সাগর উত্তাল থাকায় আরো কয়েকদিন মাছ কম ধরা পড়বে। আশা করছি দুয়েকদিনের মধ্যেই সমস্যা কেটে যাবে। আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ার সাথে সাথে জেলেদের জালে প্রত্যাশিত ইলিশ ধরা পড়বে।