মীরসরাই উপজেলার উত্তর পূর্বাঞ্চলের জনপদ ও পাহাড়ি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত এক সময়ের গহীন অরণ্য ও দুর্গম পাহাড়গুলো এখন যেন অপার সম্ভাবনার সম্ভার। অনুকূল পরিবেশে এখানে চাষ হচ্ছে আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচুসহ নানা জাতের মৌসুমী ফলের। এসব ফলে ভরে উঠেছে ‘ফলের হাট’ খ্যাত মীরসরাইয়ের করেরহাট বাজার।
উপজেলার অলিনগর, নলখোঁ, ঘেড়ামারা, সাইবেনীখিল, কালাপানিয়া, কয়লা, সোনাই, ঝিলতলী, শহীদপুরের পাহাড়ি ভূমিতে লেবু, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, আম, আনারস, লিচু, কামরাঙ্গা, পেয়ারা, কুল, জলপাই, জামরুলসহ নানা প্রকার মৌসুমী ফল-ফলাদির চাষে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বেশ সাফল্য পেয়েছেন। এখানকার উৎপাদিত ফল ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ দেশের নানা প্রান্তের চাহিদা মেটাচ্ছে। ইতোমধ্যে করেরহাট বাজার উত্তর চট্টগ্রামে মৌসুমী ফলের সেরা বাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সাপ্তাহিক হাটের দিন ব্যাপক সংখ্যক ক্রেতা বিক্রেতার সমাগমে সরগরম হয়ে উঠে পুরো বাজার।
উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের বড় একটি অংশ উঁচু-নিচু টিলা আর পাহাড় বেষ্টিত বলে সহজে চাষাবাদ হয় নানা জাতের গ্রীষ্মকালীন ফলের। এসব ফল বাজারজাত ও বিক্রয়ের অন্যতম স্থান হল এই করেরহাট বাজার। একসময় সীমিত আকারে করেরহাট ও এর আশপাশের এলাকায় আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, জাম্বুরাসহ নানা জাতের মৌসুমী ফল উৎপাদন করা হত। এখন বাণিজ্যিকভাবেই এসব এলাকার বসতবাড়ির আঙিনা, খোলা পতিত জমি বা খাসজমিতে ফল চাষাবাদ করা হচ্ছে।
মীরসরাইয়ের সর্ব উত্তরে অবস্থিত করেরহাট বাজারে সপ্তাহে দুইদিন রোববার ও বুধবার বসে ফলের বড় হাট। প্রতি হাটবারে এখানে কয়েক লাখ টাকার ফল কেনাবেচা হয়। সরেজমিনে সর্বশেষ হাটবারে করেরহাট বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মধু ফলের সমাগমে পুরো বাজারের চেহারাই বদলে গেছে। খুচরা ও পাইকার ব্যবসায়ীরা সমানে কিনছে আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, জামরুল, লিচু। মিষ্টিমধুর গন্ধে ম ম করছে বাজারের চারপাশ। বাজারের নির্দিষ্ট স্থানে জায়গা না পেয়ে অনেক বিক্রেতাকে সড়কের উপরেই ফলের পসরা সাজিয়ে বসতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, হাটবারের আগের রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে আম, কাঁঠাল, আনারস নিয়ে বিক্রেতারা বাজারে আসতে শুরু করেন। পাইকাররা হাটবার ভোর থেকেই স্থানীয় চাষি ও বিক্রেতাদের কাছ থেকে ফল সংগ্রহ শুরু করেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাইকাররা তাদের সংগ্রহ করা ফল নিজস্ব পরিবহনে করে বোঝাই করে দূর-দূরান্তে নিয়ে যায়। এখানকার কাঁঠাল ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে পাইকাররা। এ বাজারে কাঁঠালের বিকিকিনি বেশি হলেও আনারস, লেবুর বিক্রয় উল্লেখ করার মত।
বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বলেন, পুরো উপজেলার মধ্যে মৌসুমী ফলের জন্য বিখ্যাত করেরহাট বাজার। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হওয়ায় এ বাজারের প্রায় সব ফলই ফরমালিন তথা বিষমুক্ত। করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, স্থানীয় ও পাহাড়ি অঞ্চল থেকে কৃষকরা যেন তাদের উৎপাদিত মৌসুমি ফল নির্বিঘ্নে বেচাকেনা করতে পারে এ জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। ভবিষ্যতে ফলের হাট নিয়ে আরো ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।