নগরীর পাথরঘাটার নজুমিয়া লেনে পুরনো ভবন খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া দুইশ’ বছরেরও বেশি সময় আগেকার মাটির মটকাগুলো প্রত্ন সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে এসব মটকা যাদুঘরে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র। অপরদিকে এই মটকা নিয়ে গতকাল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদন ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। গতকালও বিপুল সংখ্যক মানুষ পাথরঘাটায় গিয়ে মাটির মটকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। গতকাল ৫টি মটকা ভিটির তলা থেকে বের করা হয়েছে। এগুলোও খালি এবং উপুড় করা ছিল।
সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসায়ী হাজী শরিয়ত উল্লাহ তিনশত বছর আগে মিয়ানমারের রেঙ্গুন (ইয়াংগুন) থেকে সারের জাহাজে বোঝাই করে মাটির এই মটকাগুলো আনেন এবং ঘরের ভিটির তলায় স্থাপন করে ইট সুরকির সুরম্য ভবন নির্মাণ করেন। দুইশ’ বছরেরও বেশি সময় আগেকার ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় হাজী শরিয়ত উল্ল্যাহ’র উত্তরসূরীরা ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেন। ইতোমধ্যে ভবনটির উপরের অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভিটি ভাঙতে গিয়েই একের পর এক মাটির মটকা বের হয়ে আসছে। যেগুলো শুধু ভিটির পাকা ফ্লোরের নিচে উপুড় করে স্থাপন করা হয়েছে। প্রথমদিন ১৮টি মটকা বের করে আনা হয়। গতকাল দ্বিতীয় দিন বের করা হয় আরো ৫টি। ভিটির নিচে অন্তত দুইশ’ মটকা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভবনের নিচের মটকাগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মাঝে গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে চুয়েটের প্রাক্তন ভিসি ও চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম মটকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। তিনি বিশেষ কোনো কৌশল হিসেবে মটকাগুলো ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারণা ব্যক্ত করেন। তবে মাটির এই খালি মটকা কিভাবে গত দুইশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে হাজার হাজার টন ওজন ধারণ করে অক্ষত রয়েছে তা নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র থেকে এই বিশেষ মটকাগুলো প্রত্নসম্পদ হিসাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সংগঠনের চেয়ারম্যান আলীউর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ২০১৫ সালের প্রত্ন আইনে স্থাবর সম্পত্তি ১০০ বছর ও অস্থাবর সম্পত্তি ৭৫ বছরের পুরনো হলে তা প্রত্ন সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হবে। তিনি মাটির এই মটকাগুলো জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আগ্রাবাদ জাতিতাত্ত্বিক যাদুঘরে সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান। গতকালও খালি মটকা বের করে আনায় এখানে কোনো ধরনের গুপ্তধন থাকার সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া হয়েছে।