মঙ্গল গ্রহে মানুষের প্রথম অভিযানের পরিকল্পনা শুরু হয় বহু বছর আগে, যখন পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা মঙ্গলে প্রাণের সন্ধানে তাদের প্রথম মহাকাশযান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। মহাকাশযান “ডিসকভারি” মঙ্গলের বুকে অবতরণের জন্য তৈরি হয়, এবং পৃথিবীর মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ডাক্তার ইভা, একজন অভিজ্ঞ এবং সাহসী বিজ্ঞানী, যিনি সবসময়ই মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে আগ্রহী ছিলেন।
যখন ডিসকভারি মঙ্গলে অবতরণ করল, বিজ্ঞানীরা প্রথমে চারপাশের ধুলো, পাথর আর লাল মাটির খাঁজকাটা ভূখণ্ড দেখছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই, দূর থেকে দেখা গেল কয়েকটি অদ্ভুত আকৃতির প্রাণী। তারা দেখতে অনেকটা পৃথিবীর কুকুরের মতো, কিন্তু তাদের মধ্যে ছিল কিছু অদ্ভুত বিষয়্ততারা অনেক বুদ্ধিমান এবং অনেকটা মানুষদের মতো আচরণ করছিল।
ডাক্তার ইভা বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেলেন। তিনি প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও সাহস করে এগিয়ে গেলেন সেই কুকুরদের দিকে। তার সহকারী জ্যাকও সাথে ছিল। ইভা তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কুকুরটির দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললেন, “তুমি কি আমাদের কথা বুঝতে পারো?”
অবিশ্বাস্যভাবে, কুকুরটি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল। ইভা বিস্মিত হয়ে আরও সামনে এগোলেন। তিনি একটি বল ছুড়ে দিলেন কুকুরটির দিকে। কুকুরটি দ্রুত বলটি ধরে নিয়ে এসে ইভার হাতে তুলে দিল। পুরো দল হতবাক হয়ে গেল। এমন বুদ্ধিমান কুকুর তারা কখনো দেখেনি।
এরপর কুকুরগুলোর নেতা, যার নাম ছিল টাকু, এগিয়ে এসে ইভা ও তার দলের সাথে যোগাযোগ করল। টাকু জানাল, “আমরা মঙ্গল কুকুর। আমরা বহু বছর ধরে মঙ্গলে বাস করছি, কিন্তু তোমাদের মতো মানুষদের কখনো দেখিনি। তোমরা কেন এখানে এসেছ?”
ইভা বললেন, “আমরা মঙ্গলে প্রাণের সন্ধানে এসেছি। আমরা জানতে চাই এখানে আর কী আছে, তোমাদের মতো আর কেউ কি আছে?”
টাকু মৃদু হাসল এবং বলল, “আমাদের পূর্বপুরুষেরা বহু বছর আগে এখানে এসেছিল, অনেকটা তোমাদের মতোই। তারা টিকে থাকতে পারেনি, কিন্তু আমরা বিশেষ ক্ষমতার কারণে বেঁচে গেছি।“
তাদের কথোপকথনের সময় হঠাৎ করেই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেল এবং মঙ্গলের বিখ্যাত ধুলোঝড় শুরু হলো। টাকু দ্রুত তাদের সতর্ক করল, “এই ঝড় আমাদের জন্য খুব বিপজ্জনক। তোমাদের আমাদের সাথে গুহায় আশ্রয় নিতে হবে, নয়তো তোমরা টিকে থাকতে পারবে না।“
ইভা ও তার দল দ্রুত টাকুর নেতৃত্বে মঙ্গলের গুহায় প্রবেশ করল। তারা দেখতে পেল, কুকুরগুলো শুধু বুদ্ধিমান নয়, তাদের অসাধারণ প্রযুক্তিও রয়েছে। তারা নিজেদের জন্য এমন যন্ত্রপাতি তৈরি করেছে, যা মঙ্গলের প্রতিকূল পরিবেশ থেকে তাদের রক্ষা করে। গুহার ভেতর ছিল উন্নত ধরনের ল্যাবরেটরি এবং খাদ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা।
টাকু বলল, “আমরা মঙ্গলকে ভালোবাসি, এবং আমরা চাই তোমরাও মঙ্গলের পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখো। আমরা তোমাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত, কিন্তু শর্ত একটাই্তমঙ্গলের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করবে না।“
ডাক্তার ইভা ও তার দল এই শর্ত মেনে নিলেন। তারা টাকু ও তার দলের সাথে মিলে এক নতুন চুক্তি করলেন, যার মাধ্যমে দুই গ্রহের প্রাণীরা একসাথে কাজ করবে এবং জ্ঞান ভাগাভাগি করবে।
পৃথিবীতে যখন এই খবর পৌঁছল যে মঙ্গলে বুদ্ধিমান কুকুরদের সন্ধান পাওয়া গেছে, তখন তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। শিশু থেকে বড়, সবাই এই গল্প শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল। মঙ্গলের কুকুরদের বুদ্ধিমত্তা আর তাদের বন্ধুত্বের গল্প পৃথিবীর শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা হয়ে দাঁড়াল্তপ্রকৃতির সঙ্গে কিভাবে মিলেমিশে থাকতে হয়, সেটা তারা এই গল্প থেকে শিখল।
ডাক্তার ইভা, টাকু, এবং তাদের দলের যৌথ প্রচেষ্টায় মঙ্গল আর পৃথিবীর মধ্যে নতুন এক বন্ধুত্বের যুগের সূচনা হলো, যা কেবল মহাবিশ্বের জ্ঞান নয়, এক নতুন অধ্যায়ও উন্মোচন করল।