মঙ্গলের পরিবেশে চার স্বেচ্ছাসেবীকে পাঠাল নাসা

| বুধবার , ২৮ জুন, ২০২৩ at ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চার নভোচারী মঙ্গলে গেলেন? কোনো সাড়াশব্দ নেই তো! না, সৌরজগতের চার নম্বর গ্রহে যেতে এখনও মেলা দেরি। এরা গিয়েছেন এমন এক কক্ষে, যেখানকার পরিবেশ মঙ্গলের মতো করে তৈরি। উদ্দেশ্য, লাল গ্রহে যাওয়ার পর নভোচারীদের মানসিক অবস্থা কেমন হয় সেটি যাচাই করে দেখা। পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পরিস্থিতি ও অন্যান্য মানসিক চাপের অভিজ্ঞতা নিয়ে নাসার এক পরীক্ষার অংশ হিসেবে মঙ্গলগ্রহের পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি আবাসে প্রবেশ করেছেন চার স্বেচ্ছাসেবী। খবর বিডিনিউজের।

ক্রু হেলথ অ্যান্ড পারফর্মেন্স এঙপ্লোরেশন অ্যানালক (চাপিয়া)’ নামের এই মিশনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের টেঙাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনে নাসার জনসন স্পেস সেন্টারের ১৫৮ বর্গমিটারের (এক হাজার সাতশ বর্গফুট) এক বাসযোগ্য জায়গায় থাকতে দেখা যাবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। মঙ্গলে বাসস্থান তৈরির উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত তিনটি এক বছর দীর্ঘ সিমুলেটেড মিশনের একটি এটি। এগুলোর লক্ষ্য, সীমিত উপাদানে বন্দী থাকা অবস্থায় মিশনের সদস্যদের স্বাস্থ্য ও কার্যদক্ষতা মূল্যায়ন করা।

মিশনে অংশগ্রহণকারীরা ‘কৃত্রিম স্পেসওয়াক’, বিজ্ঞান পরীক্ষা ও বাসস্থান রক্ষণাবেক্ষণে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি খাদ্যের জন্য ফসল ফলানোর চেষ্টা করবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এই সিমুলেশন আমাদের মঙ্গল গ্রহে দীর্ঘমেয়াদী মিশনের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি মিশনের সদস্যদের স্বাস্থ্য ও কার্যদক্ষতা সংশ্লিষ্ট ডেটা সংগ্রহের সুযোগ দেবে। বলেন চাপিয়ার মূল পর্যবেক্ষণকারী গ্রেস ডগলাস। এই তথ্য পরবর্তীতে নাসাকে মঙ্গলগ্রহে সফল মানব মিশনের পরিকল্পনা, নকশা ও পরিচালনা সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।

এই মিশনে অংশ নেওয়া চার সদস্য হলেন গবেষক কেলি হ্যাস্টন, অবকাঠামো প্রকৌশলী রস ব্রকওয়েল, ইমার্জেন্সি মেডিসিন ফিজিশিয়ান নাথান জোনস ও মাইক্রোবায়োলজিস্ট আনকা সেলারিউ। এই মিশনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে নাসা ২০২১ সালে ‘স্বাস্থবান ও উদ্যোমী’ স্বেচ্ছাসেবী চেয়েছিল। নানা ধাপ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত এই চারজনকে বাছাই করে সংস্থাটি। এর আগেও কৃত্রিম মঙ্গল বাসস্থান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প দেখা গেছে। ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর এক ফ্যাসিলিটিতে একই ধরনের পরিবেশে কয়েকমাস সময় কাটান স্বেচ্ছাসেবীরা।

মার্কিন অঙ্গরাজ্য হাওয়াইয়ে পরিচালিত ‘হাইসিস’ নামের আরেক প্রকল্পেও বিচ্ছিন্নভাবে জীবন কাটাতে দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবীদের। তবে, ওই মিশনের এক সদস্য বৈদ্যুতিক শকের মুখে পড়ায় চারদিন পরই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। আর্টেমিস মিশনের অংশ হিসেবে আগামী তিন বছরের মধ্যেই চাঁদে পুনরায় মানুষ পাঠাতে চায় নাসা। আর একে পরবর্তীতে মঙ্গলে নভোচারী পাঠানোর ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে ব্যবহার করতে চায় মার্কিন এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।

এদিকে, স্টারশিপ রকেটের মাধ্যমে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে বাণিজ্যিক রকেট কোম্পানি স্পেসএঙ। কোম্পানির টেঙাসের ‘স্টারবেইজ’ ফ্যাসিলিটিতে রকেটটি নিয়ে কাজ চলছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট। স্পেসএঙ প্রধান ইলন মাস্ক বলেন, রকেটটির দ্বিতীয় ‘অরবিটাল ফ্লাইট টেস্ট’ চালানো হবে অগাস্ট শেষ হওয়ার আগেই। প্রথমবার উৎক্ষেপণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিস্ফোরিত হয় এটি।

মঙ্গলে ৪৮ কোটি কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রা পাড়ি দিতে সময় লাগতে পারে সাত মাস। আর কক্ষপথ সংশ্লিষ্ট হিসাব অনুযায়ী, গ্রহটিতে ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যায় প্রতি ২৬ মাসে একবার। এর মানে, গ্রহটিতে গিয়ে ফেরত আসা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে প্রায় চার বছর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটিকছড়ির খিরামে চক্ষু শিবির
পরবর্তী নিবন্ধচন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঈদ উপহার বিতরণ