দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে মোট ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, কারো সন্দেহ থাকলে তিনি চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। ভোটের পরদিন গতকাল সোমবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভোটের এই হার তিনি তুলে ধরেন। এছাড়া তিনি বলেছেন, নির্বাচনের কোনো অভিযোগ খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা থাকলে আমলে নেব। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, কারো যদি কোনো সন্দেহ, দ্বিধা থাকে, ইউ ক্যান চ্যালেঞ্জ ইট, এবং যদি মনে করেন, এটাকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাহলে ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম, যে ওটাকে চ্যালেঞ্জ করে, আমাদের অসততা, যদি মনে করেন, তাহলে সেটাকে আপনারা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
তুলনামূলক কম ভোটারের উপস্থিতি, কয়েকটি আসনে গোলযোগ আর অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলে। পরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে শুরু হয় গণনা। নির্বাচন কমিশন এবার ভোট চলার মধ্যেই স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপে দুই ঘণ্টা পরপর ভোটের হার জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তবে বাস্তবে তা হয়নি।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম দুপুরে ব্রিফিংয়ে এসে বেলা ১২টা পর্যন্ত ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পরে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়ার হিসাব দেন। তাহলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর এবারই সবচেয়ে কম ভোটের হার হচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্ন তৈরি হয় সে সময়। তবে ভোট শেষে রোববার বিকালে ব্রিফিংয়ে এসে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটের হার ৪০ শতাংশের মতো হতে পারে। পরিপূর্ণ তথ্য আসার পর এটা বাড়তেও পারে, নাও পারে।
সিইসি বলেন, টোটাল রেজাল্টটা আসার পর কে কতটা ভোট পেল, ২৯৮টা আসনের যে রেজাল্টগুলো, একজন দুজন তিনজন চারজন ওটাকে যোগ করলে একটা যোগফল বের হয়। এভাবে তিনশটা, এটা কিন্তু খুব কঠিন নয়, লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি নয়। এটাকে যোগ করলে, এঙেলে ফেলে দিলে পার্সেন্টেজটা একটা টিপ দিলেই বেরিয়ে আসে। যখন আমি ২টার সময় বলি, তখন কোনোভাবেই এটা পুরোপুরি সঠিক হওয়ার কথা না, যখন ৪টার সময় বলি, এটা কোনোভাবেই সঠিক হওয়ার কথা নয়। যখন রাতের ১০টায় বলি, যদি সব চলে আসে বা এখন যদি বলি, সব চলে আসছে, তাহলে ইয়েটা দেখা যাবে।
তিনি বলেন, এখন যে রেজাল্টটা দাঁড়িয়েছে, সেটা হচ্ছে, ৪১ দশমিক ৮ পারসেন্ট। কেউ যদি মনে করেন এ তথ্যে ভুল রয়েছে, তিনি চ্যালেঞ্জ করতে পারেন জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটের এ হার নিয়ে সমালোচনাকারীদের তথ্য প্রমাণ নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ দেওয়া হলো।
একজন প্রার্থীর মৃত্যুতে নওগাঁ–২ আসনের ভোট আগেরই পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রোববার ভোটের মধ্যে একটি কেন্দ্র স্থগিত থাকায় ময়মনসিংহ–৩ (গৌরীপুর) আসনের ফল স্থগিত রাখে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়। ফলে এ পর্যন্ত ২৯৮ আসনের ফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তাতে ২২২টি আসন পেয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ১১ আসনে জয় পেয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং একসময় বিএনপির জোটে থাকা কল্যাণ পার্টি একটি আসনে জয় পেয়েছে।
খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা থাকলে আমলে নেব অভিযোগ : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন অনিয়মের যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা থাকলে আমলে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল বিকালে নির্বাচনোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এসে ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল, ভোটের হার ও অভিযোগসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, নির্বাচনটা সমাপ্ত হয়েছে। বিভিন্ন রকম ধারণা ছিল, পক্ষে বিপক্ষে ক্যাম্পেইন ছিল। একটি গুরুত্বপূর্ণ দল ও সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে, জনগণকেও উদ্বুদ্ধ করেছে ভোটাধিকার প্রয়োগ না করার জন্য। সেটি একটি বিবেচ্য বিষয় ছিল। আমরা খুশি হতাম, যদি সব দল নির্বাচনে অংশ নিয়ে এটার সার্বজনীনতা যদি আরও বিস্তৃত হতো, নির্বাচনটা আরো বেশি অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, সেটা শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেনি।
নির্বাচন নিয়ে ভোটের দিন নানা অভিযোগ এসেছে ইসিতে। এসব অভিযোগ কতটুকু আমলে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, রিটার্নিং অফিসার যে রেজাল্ট দেন, সেটিই চূড়ান্ত। এরপর ইসি যদি সঙ্গত মনে করে, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে গুরুতর অভিযোগ থাকলে বিবেচনা করা হতে পারে।
তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করেন ভোট সঠিক হয়নি, ভোটে কারচুপি হয়েছে, ফলাফল প্রভাবিত হয়েছে, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ উন্মুক্ত থাকবে। তারা গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে নালিশ দায়ের করতে পারেন।
ইসিতে যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে, সেসব নিয়ে কমিশনও শিগগিরই বসবে জানিয়ে সিইসি বলেন, কী কী অভিযোগ এসেছে, তা নিয়ে কমিশন বসবে। যেগুলো খতিয়ে দেখার মতো প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সেগুলো দেখা হবে।
নির্বাচনোত্তর সংবাদ সম্মেল চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।