পবিত্র রমজান মাসের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। ইতোমধ্যে চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দা, ছোলা ও মাছ–মাংসসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ভোগ্যপণ্যের নিয়ন্ত্রণহীন দামে বাজারে পিষ্ট হচ্ছেন ভোক্তা। এমন কোনো পণ্য নেই, যেটির দাম হাতের মুঠোয়। সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। এমনকি জীবনরক্ষায় দরকারি ওষুধের দামও ক্রেতার নাগালের বাইরে। পাশাপাশি প্রতিদিনের অতিব্যবহৃত পণ্য–সাবান, টুথপেস্ট ও শ্যাম্পুর দামও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আসছে পবিত্র রমজান মাস। প্রতিবছরের মতো এবারও রোজাকে ঘিরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে। তারা রোজা শুরুর আগেই রোজায় ব্যবহৃত পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। ফলে ভোক্তার এখন থেকেই পণ্য কিনতে নাভিশ্বাস বাড়ছে। বলা যেতে পারে, নিম্নবিত্ত ছাড়াও মধ্যবিত্তদেরও নাভিশ্বাস অবস্থা। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের অনেকে এখন সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মাছ–মাংস কিনতে পারছেন না। তাদের জন্য বাজার করা এখন বড় ধরনের মানসিক কষ্ট ও হতাশার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ বাজারে গিয়ে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকছেন। কেউ আবার নিরুপায় ঘোরাফেরা করছেন।
বাংলাদেশে রমজান মাসে চাহিদা বেড়ে যায় এমন পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৫–৩০ শতাংশ বাড়তি থাকবে বলে আশঙ্কা করেছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের দামের সাথে এ বছরের দাম যদি এক হয়, তারপরও ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি হবে। রমজান মাসে বাজারে তেল, ছোলা, খেজুর, চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। তবে পণ্যের বাজারে কোন ধরনের ঘাটতি নেই বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলছে যে, বাজারে পণ্যের ঘাটতি না থাকলেও, ব্যবসায়ীরা যোগসাজস করে পণ্যের দাম বাড়ায় যাতে বাজার অস্থিতিশীল করা যায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, বাজারে বর্তমানে ছোলাসহ সব ধরনের ডাল, খেজুর এবং চিনির ঘাটতি রয়েছে, যার কারণে এরইমধ্যে এসব পণ্যের দামও বেড়েছে।
এদিকে, রমজানের আগে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে মর্মে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) জনসাধারণকে আতঙ্কিত হয়ে কেনাকাটা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। রমজান ও ঈদ–উল–ফিতরের আগে পিএমওতে অনুষ্ঠিত এক প্রস্তুতিমূলক বৈঠক থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বৈঠকের পর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রমজানের আগে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আমাদের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে, যা আমাদের জন্য সন্তোষজনক। রোজার সময় নিত্যপণ্য যাতে মানুষের কাছে পৌঁছায়, সাপ্লাই চেইন যাতে ঠিক থাকে সে জন্য আমরা সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি, বলেন তিনি। এ প্রেক্ষাপটে তিনি সকলকে আতঙ্কিত হয়ে কেনাকাটা করতে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি আশ্বস্ত করেন, একবারে অতিরিক্ত খাবার কেনার পরিবর্তে প্রত্যেকে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করলে কোন সমস্যা হবে না। খোলা বাজারে বিক্রয় (ওএমএস) যথারীতি অব্যাহত থাকবে এবং টিসিবি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করবে যার মধ্যে রয়েছে ভোজ্যতেল, চিনি, চাল, পেঁয়াজ এবং ছোলা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে বলেছে যে, রোজা শুরু হওয়ার আগেই বাজারে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে। বাজার পর্যবেক্ষণ বা মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, যতগুলো পর্যায়ে পণ্য হাত বদল হয় তার কোন পর্যায়েই যাতে সেগুলো মজুদ না হয় তা নজরদারি করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার সাথে তথ্য নিয়ে এ কাজটি করা হচ্ছে। বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে এবার নতুন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যে বাজারে পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া থাকবে সেই বাজার কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নেতৃবৃন্দ বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিবছর একই প্রক্রিয়ায় মূল্য কারসজি করে ক্রেতাকে ঠকাচ্ছেন। এর কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি ভোক্তাকে স্বস্তিতে রাখতে তদারকি সংস্থাগুলোর কোনো গবেষণা নেই। নেই কোনো বাজার তদারকির পরিকল্পনা। ফলে বছরের পর বছর বাজারে ভোক্তার অস্বস্তি বাড়ছে। এসব বিবেচনায় এনে যথাসম্ভব দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।