ভোগান্তি আর কতকাল

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৭ জুলাই, ২০২১ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

২০১৯ সালে শুরু হওয়া বঙ্গবন্ধু টানেল দৃশ্যমান হয়ে গেছে এক বছর পর ২০২০ সালে। ২০১৪ সালে ভিত্তিপ্রস্তর দেয়া পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে সে-ই কবে, আশা করা হচ্ছে উভয়টি আগামী বছর যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। একই সময়ে শুরু করা চট্টগ্রাম পোর্ট কানেক্টিং রোড বা পিসি রোডের উন্নয়ন কাজটি দৃশ্যমান হওয়া তো দূরের কথা, স্থানীয়দের ভাষায় সড়কটিই অদৃশ্য হয়ে গেছে। তারা বলছেন, মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধ বিধ্বস্ত নগরে রূপ নিয়েছে এলাকাটি। বছরের পর বছর কি করে যে একটি সড়ক এভাবে অবহেলায় পড়ে থাকে, মনেই হয় না এর অভিভাবক আছে? অথচ সড়কটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা অভিভাবক প্রতিষ্ঠানের একজন মেয়রের সময়কালের অর্ধেকটা গেল, এরপর একজন প্রশাসকের পুরো সময়কাল গেল, আরেকজন নতুন মেয়রেরও ৬ মাস যেতে বসেছে। কিন্তু কিছুতেই দৃশ্যমান হচ্ছে না পিসি রোড। সবার হুঙ্কার দেখেছে নগরবাসী। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না। সাবেক মেয়রের ‘প্যাচওয়ার্ক’ দিয়ে হয়নি, প্রশাসকের ‘ক্যারাভানে’ এ সড়ক সোজা হয়নি। নতুন মেয়রের ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কাজেও হয়নি কিছু। সড়কের আশপাশের ব্যবসায়ীরা তো ভীষণ ক্ষুব্ধ। লক্ষ-কোটি টাকা বিনিয়োগকারী এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা তো দিনরাত নেই জপে চলেছেন কবে শেষ হবে এ ঝামেলা। নয়া বাজার জংশনের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী মো. তোফাজ্জল বলেন, আগের দোকান মালিক ব্যবসাই ছেড়ে দিয়েছেন। আমি শুরু করেছি কয়েক মাস হল। কিন্তু সড়কের বেহাল দশায় বেচাবিক্রি নেই। সবারই এক অবস্থা বলে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সড়কটি দিয়ে বন্দরের মালবাহী বিশাল বিশাল গাড়িগুলো চলাচলের সময় ঝাঁকুনি দেখে মনে হয় এখনি হয়তো ঘটবে দুর্ঘটনা। আজ এত বছরে গর্তে পড়ে কত গাড়ির যন্ত্রাংশ যে নষ্ট হয়েছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। লোকসান আর লোকসান গাড়ি মালিকের। পিসি রোডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জংশন হচ্ছে নয়াবাজার বিশ্বরোড মোড়। এ জংশন দিয়ে পুরো হালিশহরের বাসিন্দাদেরই চলাচল বলা যায়। ২০১৭- ১৮ সালের দিকে এ সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হলেও মূলত ২০১৪-১৫ সাল থেকে সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ে। কাজ শুরুর পর থেকে তো আরো করুণ হাল। গাড়ি চলাচল তো দূরে থাক পায়ে হেঁটে চলারও অনুপযোগী হয়ে পড়ে সড়কটি। প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের মেয়াদকালে সড়কের একপাশে পিচ ঢালাইয়ের কাজ কিছুদূর এগোলেও অন্যপাশে কোনো কাজই হয়নি। বিশেষ করে তাসফিয়া থেকে সাগরিকা মাজার সংলগ্ন সড়কের অবস্থা বর্তমান সময়ে একেবারেই খারাপ। যতটুকু কাজ হয়েছে ততটুকুতে গাড়ির চাপে আবার কাজের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। রামপুর ওয়াপদার সামনে তো সড়ক উঁচুনিচু ঢেউয়ের সৃষ্টি করেছে। যা দ্রুতগামী গাড়ির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। নয়াবাজার জংশনে এখন দিন রাত লেগে থাকে যানজট। শুধু বিশ্বরোড পার হতেই সময় লাগে ঘণ্টার চেয়েও বেশি সময়। প্রতিদিনই নয়া বাজারের জ্যাম আতঙ্ক নিয়ে হালিশহরের মানুষকে ঘর থেকে বের হতে হয়। শহরের অন্য কোনো প্রান্ত থেকে সিএনজি ট্যাঙি হালিহরের দিকে ভাড়ায় আসতেই চায় না নয়া বাজারের জ্যাম আতঙ্কে। আসলেও জ্যামে পড়লে মাঝপথে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। দক্ষিণ কাট্টলীর বাসিন্দা চবি শিক্ষার্থী ইশমাম জানান, সন্ধ্যার পর নয়া বাজার বিশ্বরোডের জ্যাম বৌ বাজার- ঈদগাঁ পর্যন্ত চলে যায়, অনেক সময় তা কাঁচা রাস্তা পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। ফলে এ রুটে চলাচলকারী টেম্পোগুলো মাঝপথে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। এরপর হেঁটেই ফিরতে হয় ঘরে। তাছাড়া বিশ্বরোডের যে অবস্থা বর্ষায় তো পানিতে সাগর হয়ে যায়। গাড়িগুলো বিশ্বরোড পারই হয় না। তিন নম্বর রুটে চলাচলকারী টেম্পো মালিক মো. কুতুব বলেন, গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রতিদিনই নষ্ট হচ্ছে। আমরা খুবই লোকসানে আছি। নয়া বাজার জংশন পার হতে যানজট তো আছেই সেই সাথে গর্তে পড়লে আর রক্ষা নেই।
দক্ষিণ কাট্টলীর বাসিন্দা জসীম সিদ্দিকী বলেন, পদ্মা সেতু প্রায়ই হয়ে গেছে, বঙ্গবন্ধু টানেলও হওয়ার পথে, দ্রুত গতিতেই চলছে এসবের কাজ। কিন্তু পিসি রোডের কাজ কেন ধীর গতিতে চলছে এর তদন্ত হওয়া উচিত। কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কেন এত বিলম্বেও কাজ শেষ হচ্ছে না তা খতিয়ে দেখা জরুরি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কেন কাজে এত ধীরগতি দেখাচ্ছেন, তাদের কাছে তো স্থানীয় পর্যায়ে কেউ চাঁদা দাবি করেছে এমনটাও শোনা যায়নি। তবুও কেন এরকম হল এর তদন্ত দাবি করছি। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এভাবে করে পার না পায় সে ব্যবস্থাই করা উচিত। তাঁর ধারণা টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ পরবর্তীতে এ কাজ নিয়ে নিশ্চয়ই কোনো সিন্ডিকেট কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়েছে যার প্রভাব পড়েছে কাজে।
তিনি আরো বলেন, পিসি রোডটির উপর সম্ভবত শনির দশা ভর করেছে। একজন মেয়র তাঁর মেয়াদের অর্ধেক সময়ই ক্ষমতায় থেকে কাজ উদ্ধার করতে পারেননি। আরেকজন প্রশাসক চেষ্টা করেও তার অল্প মেয়াদে কাজ শেষ তো করতে পারলেন না উল্টো ঠিকাদারই পালিয়ে গেল। আরেকজন তাঁর মেয়াদের ৬ মাস অতিবাহিত করলেন, কিছুই দেখাতে পারেননি। বর্ষায় জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে যে ভাঙাচোরা সড়কে পর্যাপ্ত ইট-কংকর ফেলে দিলেও হয়, সেটিও করা হয়নি। এর জন্য আর কত কাল ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পোহাতে হবে সেই সময়টুকু জানতে চায় জনগণ।
উল্লেখ্য, জাপানের দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ‘সিটি গভর্নেন্স প্রকল্পের’ আওতায় ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর কাজটি উদ্বোধন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন নিখিল কুমার চাকমা
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা