দৈনিক আজাদীতে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে গত ২১ ফেব্রুয়ারি। বলা হয়েছে, চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গায় রোগ নির্ণয়কারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঝটিকা অভিযান চালিয়েছে র্যাবের একটি দল। এ সময় নোংরা পরিবেশ ও মানসম্মত প্যাথলজিক্যাল মেডিসিন ব্যবহার না করায় ৪টি প্রতিষ্ঠানকে নগদ আড়াই লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় বেশকিছু ফার্মেসিতেও অভিযান চালায় দলটি। র্যাব জানায়, অভিযানের সময় নোংরা পরিবেশ এবং মানসম্মত প্যাথলজিক্যাল মেডিসিন ব্যবহার না করায় চার ডায়াগনস্টিক সেন্টার যথাক্রমে শেভরণ, একুশে, ডিজিটাল ও হিলসাইড প্যাথলজিকে নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনিসুর রহমান বলেন, মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। পরীক্ষাগারগুলোতে পরিচ্ছন্ন ও মানসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। যেকোনো ধরনের অনৈতিক কাজ বন্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
শুধু চকরিয়ার মতো গ্রামে নয়, চট্টগ্রাম শহরেও প্রচুর মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধের ব্যবসা সারা বিশ্বেই বেশ জমজমাট। ভেজাল ওষুধ বলতে বোঝায়, ওষুধে যা যা উপাদান থাকার কথা তা না থেকে অন্য কোন উপাদান থাকা বা কার্যকরী কোন উপাদান না থাকা। পাশাপাশি নিম্নমানের ওষুধ বলতে বোঝায় নির্দিষ্ট ওষুধে যে পরিমাণ ওষুধ থাকার কথা তার চাইতে কম পরিমাণ ওষুধ থাকা বা মান নিয়ন্ত্রণের যে শর্ত তা পূরণ না করা। বিশ্বে কি পরিমাণ ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হয় তার সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও ধারণা করা হয় এর বাৎসরিক পরিমাণ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা) যা অবৈধ বাণিজ্যের বিবেচনায় দ্বিতীয় (১ম মাদক)। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই সমস্যা প্রকট আকারে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি তা বিস্তৃত হচ্ছে উন্নত দেশগুলোতেও। খোদ যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত ওষুধের শতকরা ৫ ভাগ ভেজাল বা নিম্নমানের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে বিশ্বে যত ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ তৈরি হয় তার শতকরা ৩৫ ভাগ তৈরি হয় ভারতে যার বাৎসরিক বাজার মূল্য ৪০০০ কোটি রুপি (৬০০০ কোটি টাকা) এবং ভারতের মোট ওষুধের বাজারের যা শতকরা ২০ ভাগ। বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শতকরা ২৩ ভাগ ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী দেশ নাইজেরিয়া। এই দেশটির মোট উৎপাদিত ওষুধের শতকরা ৪১ ভাগই ভেজাল বা নিম্নমানের। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধের পরিমাণ তাদের মোট উৎপাদিত ওষুধের শতকরা ১৫ ভাগ যার বাৎসরিক বাজার মূল্য ১৬০০ কোটি টাকা।
একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য মতে বাংলাদেশে ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধের বাৎসরিক বিক্রি প্রায় ১০০০ কোটি টাকা যা মোট বিক্রির প্রায় শতকরা ১০ ভাগ।
নকল, ভেজাল ও ক্ষতিকর ওষুধ প্রতিরোধ এত সহজ হবে না বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা, বিশেষ করে অনুন্নত ও দরিদ্র দেশগুলোতে। কারণ এসব দেশে মাথাপিছু আয় নগণ্য হওয়ার কারণে দামি ওষুধ কেনার সামর্থ না থাকায় মানুষ সস্তায় ওষুধ পেতে চাইবে। ওষুধের দাম বেশি হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল ওষুধ উৎপাদনে ও বিক্রয়ে বেশি উৎসাহী হয়। এ ফর্মূলা ওষুধ কোম্পানিগুলোর ক্ষতির পরিমাণ বাড়ায়।
দেশের ওষুধের দোকানগুলোতে নকল ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের সংখ্যাও কম নয়। মুনাফা বেশি হওয়ায় অসৎ ব্যবসায়ীরা মানহীন ওষুধ বিপণনেই বেশি আগ্রহী। অভিযোগ রয়েছে নকল, মানহীন ও অনিবন্ধিত ওষুধ বিপণন সঙ্গে জড়িত রয়েছে অনেক ব্যবসায়ী। তাদের খুঁটির জোর এতই বেশি যে, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনাও কঠিন হয়ে পড়ে। নকল ভেজাল ওষুধ তৈরি কিংবা বিক্রির দায়ে যাদের গ্রেফতার করা হয়, তারা আইনের ফাঁক গলিয়ে ছাড়া পেয়েই আবারও জড়িয়ে পড়ে এ ঘৃণ্য ব্যবসায়। ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধের সমস্যা অত্যন্ত গুরুত্ববহ কারণ এটি মানব স্বাস্থ্য ঝুঁকির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষজ্ঞদের মতে ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধের প্রভাব মাদক, ম্যালেরিয়া, এইডস বা অস্ত্রের সহিংসতার চাইতে কোন অংশে কম নয়। একদিকে নকল ভেজাল অন্যদিকে উচ্চমূল্যের দাপটে অসহায় হয়ে পড়ছে দেশের মানুষ। এ অবস্থার অবসান হওয়া উচিত।