ভূতের উৎসব

রেজাউল করিম | বুধবার , ৬ নভেম্বর, ২০২৪ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

হ্যালোইন উৎসব এখন বাংলাদেশেও বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর হ্যালোইন উদযাপন করা হয়। প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর এ উৎসব উদযাপন করা হয়ে থাকে। ভুতুড়ে এই উৎসবটির ইতিহাস প্রায় দুই হাজারের। অনেকেই ভাবেন, এ দিন হয়তো ভূতের মতো সাজার জন্যই পালন করা হয়। মূলত মৃত আত্মাদের স্মরণ করতে এ দিনটি পালন করা হয়।

পরশু রাতে পষ্ট চোখে দেখনু বিনা চশমাতে/ পান্তভূতের জ্যান্ত ছানা করছে খেলা জোছনাতে/ কচ্ছে খেলা মায়ের কোলে হাত পা নেড়ে উল্লাসে/ আহলাদেতে ধুপধুপিয়ে কচ্ছে কেমন হল্লা সে/ শুনতে পেলাম ভূতের মায়ের মুচকি হাসি কট্‌কটে/ দেখছে নেড়ে ঝুন্‌টি ধ’রে বাচ্চা কেমন চট্‌পটে/ উঠছে তাদের হাসির হানা কাষ্ঠ সুরে ডাক ছেড়ে/

খ্যাঁশ্‌ খ্যাঁশানি শব্দে যেন করাত দিয়ে কাঠ চেরে/ যেমন খুশি মারছে ঘুঁষি, দিচ্ছে কষে কানমলা/ আদর করে আছাড় মেরে শূন্যে ঝোলে চ্যাং দোলা/ বলছে আবার, আয়রে আমার নোংরামুখো সুঁটকো রে/ দেখনা ফিরে প্যাখনা ধরে হুতোমহাসি মুখ করে।’ (‘ভূতুড়ে খেলা’: সুকুমার রায়)

বাংলাসাহিত্যে নানা নামের ভূত রয়েছে। পেত্নী, শাঁকচুন্নি, চোরাচুন্নি, পেঁচাপেঁচি, মেছোভূত, দেও, নিশি, মামদো ভূত, গেছো ভূত, জোকা ভূত, ব্রম্মদৈত্য, আলেয়া, বেঘোভূত, কানাভুলো, ডাইনি, ঝেঁয়ো পেত্নী, ডাকিনী, গো ভূত ইত্যাদি। এদের নিয়ে আছে নানা কল্পকাহিনি।

১৭৪৫ সালের দিকে হ্যালোইন শব্দের উৎপত্তি। হ্যালোইন শব্দটি এসেছে স্কটিশ ভাষার শব্দ অল হ্যালোজ ইভ থেকে। হ্যালোইন শব্দের অর্থ পবিত্র সন্ধ্যা। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে হ্যালোজ ইভ শব্দটি এক সময় হ্যালোইনে রূপান্তর হয়। হ্যালোইন উৎসবের মূল থিম হলো, ‘হাস্যরস ও উপহাস করার মাধ্যমে মৃত্যুর ক্ষমতার মুখোমুখি হওয়া। এদিকে প্রায় ২০০০ বছর আগে বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্সে বসবাস করতো কেল্টিক জাতি। নভেম্বরের প্রথম দিনটি তারা নববর্ষ বা ‘সাহউইন’ হিসেবে পালন করতো। গ্রীষ্মের শেষ ও অন্ধকার বা শীতের শুরু বলে মনে করতো তারা। কেল্টিক জাতির ধারণা ছিলো অক্টোবরের শেষ দিনের রাত সবচেয়ে খারাপ। যে রাতে সব প্রেতাত্মা ও অতৃপ্ত আত্মারা মানুষের ক্ষতি করতে পারে। আর তাই কেল্টিক জাতির সদস্যরা এই রাতে বিভিন্ন ধরনের ভূতের মুখোশ ও কাপড় পরতো। তারা নির্ঘুম রাত কাটাতে আগুন জ্বালিয়ে মুখোশ পরে বৃত্তাকারে একসঙ্গে ঘুরত ও মন্ত্র পড়ত। আর সময়ের পরিক্রমায় কেল্টিক জাতির ‘সাহউইন’ উৎসবই বর্তমানে হ্যালোইন উৎসব হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মতে, হ্যালোইন উৎসবে প্রচলিত মিথ হলো, এই রাতে দেবতা সামান সব মৃত আত্মাদের পৃথিবীতে আহ্বান জানান। উড়ন্ত ঝাড়ুতে করে হ্যালোইন ডাইনি উড়ে বেড়ায় আকাশজুড়ে। কখনো বা তিনি কড়া নাড়েন বিভিন্ন বাড়ির দরজায়। জানা যায়, মধ্যযুগ থেকেই হ্যালোইন উৎসব পালিত হয়ে আসছে। আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ডের উচ্চ ভূমি ও ফ্রান্সের উত্তর অংশজুড়ে তখন কেল্টিক সভ্যতার বিস্তার ছিলো। শতাব্দীর শুরুতেই শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক সবাই ঘটা করে হ্যালোইন উদযাপন শুরু করে। এই উৎসবে হ্যালোইন পোশাক পরে পার্টিতে অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে কুমড়া খোদাই করা, মুখোশ পরা, ভয় দেখানো, ভুতুড়ে গল্প বলা, ভৌতিক সিনেমা দেখা ও ভুতুড়ে সাজসজ্জায় সবাই ব্যস্ত থাকে।

উদযাপনকারীরা পার্টিতে এবং ট্রিকঅরট্রিটিংয়ের জন্য মুখোশ এবং পোশাক পরে, যা দরিদ্রদের খাবারের জন্য ভিক্ষা করার অনুমতি দেওয়ার ব্রিটিশ অনুশীলন থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। ট্রিকঅরট্রিটাররা ঘরে ঘরে এই হুমকি দিয়ে যায় যে তারা ট্রিট না পেলে ট্রিট করবে, সাধারণত ক্যান্ডি। পার্টিতে কঙ্কাল এবং কালো বিড়ালের পাশাপাশি, ডাইনি এবং ভ্যাম্পায়ারের মতো ভীতিকর প্রাণীদের মতো সাজা হয়ে থাকে। আরেকটি প্রতীক হলজ্যাকলণ্ঠন, একটি ফাঁপা কুমড়া, মূলত একটি শালগম, একটি দানবীয় মুখ খোদাই করা, ভেতরে একটি মোমবাতি জ্বালানো। বর্তমানে হ্যালোইন শুধু ইউরোপআমেরিকা নয়, বিশ্বের প্রায় সবদেশে ছড়িয়ে পড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যালোইন উদযাপনের ট্রেন্ড দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেলেও বর্তমানে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছোট্ট ছেলে
পরবর্তী নিবন্ধমাকড়সা ও টিকটিকি