ভালো ফলাফলের জন্য

চম্পা চক্রবর্তী | রবিবার , ১৩ জুলাই, ২০২৫ at ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ

দশ বছরের লেখাপড়ার পরিশ্রমের সুফল এই বোর্ড পরীক্ষা। হ্যাঁ এসএসসি পরীক্ষা দশ বছরের সাধনা। সমপ্রতি এসএসসির ফল প্রকাশিত হয়েছে। কোথাও আনন্দ চোখে পড়ল না। মিষ্টির দোকানে তেমন ভিড় নেই। নিউজ মিডিয়ায় আগের মতো দৌড়াদৌড়ি নেই। আমাদের সময়ের কথা মনে পড়ে গেল। পরিবারের প্রথম সন্তান প্রথম মেট্রিক পরীক্ষার্থী। চিন্তা শুধু আমার নয়। মা, বাবা, ঠাম্মা, কাকা কাকিমা সবার। ছোট ভাই বোনদের বাড়ির বড়রা শুধু সাবধান করতো যেন কেউ আমাকে ডিস্টার্ব না করে। কত ঠাকুর দেবতাকে মানত শুধু পাশ করিয়ে দিলে হবে।নিয়ম করে কাক ডাকা ভোরে ডেকে দিতো পড়ার জন্য। গুরুজনরা বলতো ভোরের পড়া নাকি মনে থাকে। সেই আশায় ঘুমকে হারাম করে বই নিয়ে পড়তে বসতাম। অনেক সময় কাঁথার ভিতর বসে পড়া। পরিবারে বড়রা শুধু বলতো পরীক্ষা শেষ হলে তখন দিন রাত ঘুমাতে পারবে। পরীক্ষা দিতে যাবার সময় বড়দের প্রণাম করলে টাকা দিতো। তখন দুই বেলা সকাল বিকাল পরীক্ষা হতো। সকালের পরীক্ষা শেষ হলে বিরতিতে আত্মীয় স্বজন ডাব, কোক, আরো কতো রকমের খাবার নিয়ে গেটে উপস্থিত থাকতো। সঠিক সময়ে পরীক্ষার সেন্টার পৌঁছাতে কয়েকজন মিলে গাড়ি রিজার্ভ করে ফেলতো।

আমাদের সময় ডিভিশন ছিলো। সারা গ্রামে মিলে একজন দুজন ফার্স্ট ডিভিশন পেতো তারা অনেক মেধাবী। সবাই তাকে দেখতে যেত। এরপর সেকেন্ড ডিভিশন পেলে সবার মুখে মুখে। তখনকার সময় রেজাল্ট পেপারে প্রকাশিত হতো পেপার হাতে আসতে অনেক সময় দিন গড়িয়ে রাত পার হয়ে যেত। সে কি টেনশন। একজন পেপার আনলে সবাই মিলে সেখানে রেজাল্ট দেখতো। কেউ ভয়ে স্কুলে যেতো না যদি খারাপ কিছু হয় সেই ভয়ে। পেপারে ছোট ছোট নম্বর গুলো দেখতে গিয়ে কত বার ভুল হতো, চোখ ঝাপসা হয়ে যেত। রেজাল্টের পর শুরু কে কে লেটার পেয়েছে। খুশিতে সারা পাড়াতে বাড়ি বাড়ি মিষ্টি খাওয়াতো। সেই সাদা মিষ্টি এখন সেই সাদা মিষ্টি কেউ খায় না। পেপারে রেজাল্ট অনেক ভুলও হতো। ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়। মাইর খাওয়ার পর জানতে পারল সে পাশ করছে। সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন শিক্ষককেরা। সব অভিভাবক বারবার শিক্ষককে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ধন্যবাদ দিতো। গর্বে শিক্ষকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠতো। তখন মাথায় হাত বুলিয়ে বলতো দেখেছিস ক্লাসে ভালো করে পড়ার জন্য মেরেছি বলে আজ ভালো রেজাল্ট করেছিস। সত্যি এই এসএসসি পরীক্ষার পিছনের শুধু পরীক্ষার্থী নয় অনেকের অবদান থাকে। সব পরীক্ষার্থীর জন্য রইলো শুভকামনা। সবাই পরিশ্রম করে ভালো ফলাফলের জন্য।

লেখক : শিক্ষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে